Subscribe our Channel

ঢাল নাই তলোয়ার নেই নিধিরাম সদ্দার! ডাক্তার নেই চলছে চিকিৎসা

এমদাদুল ইসলাম ভূট্টো, ঠাকুরগাঁও: চরম অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলছে ঠাকুরগাঁওয়ে প্রাইভেট ভাবে গড়ে উঠা হাসপাতাল (ক্লিনিক) ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলো। ব্যাঙের ছাতার মতো শহর থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জে গড়ে উঠেছে অনুমোদন বিহীন অসংখ্য ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। দেখে যেন মনে হয় ঢাল নাই তলোয়ার নেই নিধিরাম সদ্দার।
সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নের কিসামত তেওয়ারীগাঁও মুন্সি পাড়া মূল সড়কের পাশেই গড়ে উঠা জনসেবা ক্লিনিক ও ডায়াগনিস্টক সেন্টারে গিয়ে এমনই চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। একটি সূত্র জানায় এই প্রতিষ্ঠানের মালিক টার্কি বাবলুর ভাগ্নে।
কিসামত তেওয়ারীগাঁও গ্রামের রাজ্জাকুল ইসলাম ঝড়– বলেন সম্প্রতি পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার কিসামত হাজারী গ্রামের প্রতিমা রাণী (৩৬) দালালের মাধ্যমে সিজার জনিত সমস্যা নিয়ে ২ লাখ ২৪ হাজার টাকা চুক্তিতে ভর্তি হন জনসেবা ক্লিনিকে। চিকিৎসা শেষে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ আরো মোটা অংকের টাকা দাবী করলে উভয় পক্ষের মধ্যে বাগবিতন্ডার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় এলাকার রহিম, রফিকুল, আইনুল, জুয়েলসহ অনেকেই এগিয়ে আসেন। তাদের অভিযোগ এখানে কোন ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য জনবল নেই। তাহলে তারা চিকিৎসা দেন কিভাবে ? এর মধ্যে একজন অভিযোগ করে বলেন এখানে তো চিকিৎসা হয় না, মাদকসহ নারীদের এনে দেহ ব্যবসা করা হয় ।
প্রতিমা রাণীর সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন আমাদের সাথে ২ লাখ টাকার কথা হয়। কিন্তু রিলিজের সময় মোটা অংকের দাবী করলে আরো ২ লাখ টাকা দিয়ে রিলিজ নিতে হয়। সব মিলে ৪ লাখ টাকা দিতে হয়।
অনুমোদন বিহীন এই সব প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারেও রয়েছে অসংখ্য অভিযোগ। ফলে এক শ্রেণির ব্যক্তির হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন রোগীরা। এসব প্রতিষ্ঠানের নেই লাইসেন্স, নিজস্ব ভবন, পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও দক্ষ জনবল। এই সকল প্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধে হাইকোর্টের দিক নির্দেশনা থাকলেও নেই স্বাস্থ্য বিভাগের তেমন কোন উদ্যোগ।
মেডিকেল প্র্যাকটিস অ্যাক্ট (১৯৮৩) অনুযায়ী ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে তুলতে হলে প্রথম শর্ত হলো নিজস্ব ভবন থাকতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের সনদ পত্র, পৌরসভা/ইউনিয়নের বর্জব্যবস্থাপনা চুক্তিপত্র, নিয়োগ প্রাপ্ত ২ জন মেডিকেল অফিসার, প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ৪ জন নার্স, প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত টেকনিশিয়ান, স্ইুপার, আয়া, বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সম্মতি পত্র ও প্রয়োজনীয় আধুনিক সরঞ্জাম।
ঠাকুরগাঁওয়ের অধিকাংশ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এ নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অহরহ ভুল চিকিৎসা ও রিপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন।
সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্র অনুযায়ী ৫ উপজেলায় ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ১১৪ টি। স্বাস্থ্য বিভাগের তালিকা ভূক্ত ৯০টি।
শহরের সরকারপাড়া মহল্লার আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন মানুষের জীবন মরণের প্রশ্নের বিষয়টি নিয়ে যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করে তাদের জবাবদিহিতার বিষয়টিতে স্বাস্থ্য বিভাগের গুরুত্ব দেয়া উচিত। লাগামহীন ভাবে এই প্রতিষ্ঠান গুলো তাদের অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
বিল্ডিং মালিক রিপন হাজীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি। জনসেবা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক কৃষ্ণ রায়ের কাছে প্রয়োজনিয় কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি দেখাতে পারেননি। উল্টো তিনি বলেন আমরা রংপুর ফেরত রোগীকেও ভালো করেছি।
ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন ডা. মাহফুজার রহমান সরকার জানান করোনা পরিস্থিতির কারনে ক্লিনিক গুলো ভিজিট করা সম্ভব হয়নি। যে সমস্ত ক্লিনিকে অনিয়ম দেখা যাবে। সে গুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে একজন রোগীর কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা নেয়ার বিষয়টি রুপ কথার মতো মনে হচ্ছে। সিজার জনিত সমস্যায় এতো টাকা রংপুর বিভাগের অর্তাধুনিক হাসপাতাল গুলোতে নেয়া হয় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *