Subscribe our Channel

ঈশ্বরদী (পাবনা) :পাবনার ঈশ্বরদীতে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে রেললাইন বেঁকে যাচ্ছে ও সড়কের পিচ গলে যাচ্ছে। টানা ১৫ দিনের তাপপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি থেকে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে।ঈশ্বরদী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সহকারী পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন বলেন, শুক্রবার বিকেল ৩টায় ঈশ্বরদীতে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এটি চলতি মৌসুমে ঈশ্বরদীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।টানা দাবদাহে ঈশ্বরদীর জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। তীব্র তাপপ্রবাহে সবচেয়ে বিপদে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। রোদের তীব্রতায় পিচঢালা সড়ক থেকে উষ্ণ তাপ ছড়িয়ে পড়ছে মানুষের চোখে মুখে।তীব্র দাবদাহে ঈশ্বরদী শহরের পোস্ট অফিস মোড়ে ঈশ্বরদী-পাবনা সড়কের পিচ গলে যাচ্ছে। সড়কে চলা যানবাহনের চাকার সঙ্গে লেগে যাচ্ছে গলে যাওয়া পিচ। তাই বেশিরভাগ যানবাহন খুব সতর্কতার সঙ্গে পিচ গলে যাওয়া জায়গাগুলো অতিক্রম করছে। পিচ গলে যাওয়া সড়কে বালু ছিটিয়ে চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মচারীরা।স্থানীয় বাসিন্দা আসাদুর রহমান বীরু বলেন, ঈশ্বরদীতে অতি তাপমাত্রার জন্য সড়কের পিচ গলে যাচ্ছে। রেললাইন বাঁকা হয়ে যাচ্ছে। পিচগলা পিচ্ছিল সড়কে চালকরা খুব সাবধানে গাড়ি চালাচ্ছেন। এখানে এলেই গাড়ির চালকরা আতঙ্কে গাড়ির গতি কমিয়ে দেন।খায়রুল আলম জানান, প্রায় ৭ দিন ধরে বেলা সাড়ে ১১টার পর থেকে রাস্তার পিচ গলতে শুরু করে। দুপুর গড়ানোর পর রাস্তার পিচ গলে সড়কে রিকশা, অটোবাইক, মোটরসাইকেলের চাকায় লেগে যায়। এতে তাদের দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে, রাস্তাও উঁচু-নিচু হয়ে যাচ্ছে।সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, সাধারণত সড়কে যে পিচ ব্যবহার করা হয় তা ৬০-৭০ গ্রেডের। এর গলনাঙ্ক ৪৮ থেকে ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে পিচ গলার কথা। কিন্তু তার অনেক আগেই পিচ গলে যাচ্ছে।এদিকে সওজ সংশ্লিষ্ট সূত্র পিচ গলার কারণ হিসেবে দাবি করেছে, তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির ওপরে থাকলে বাতাসের আদ্রতার কারণে অনুভূতির পরিমাণ আরও কয়েক ডিগ্রি বেশি হয়। সড়কের পিচের ওপরে এই তাপমাত্রা আরও প্রায় ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকে। আর কালো হওয়ায় এই পিচ সূর্যের তাপও শোষণ করে বেশি।

এছাড়া সড়কে চাকার ঘর্ষণের ফলে উৎপাদিত তাপও এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় পিচ গলে যেতে পারে। তবে এর বাইরে সড়কের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।ঈশ্বরদী উপজেলা প্রকৌশলী এনামুল কবির বলেন, সড়কের বিটুমিনের পরিমাণ সঠিক রয়েছে। কোনো সমস্যা নেই। প্রচণ্ড তাপের কারণে শহরের পোস্ট অফিস মোড় সড়কে বিটুমিন গলে যাচ্ছে। পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে বিটুমিন গলে যাওয়ার উপক্রম স্থানগুলোতে বালু দেওয়া হয়েছে। এতে আর কোনো সমস্যা হবে না।ঈশ্বরদী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ দিন যাবত ঈশ্বরদীতে তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে। এর মধ্যে ১৩-১৬ এপ্রিল পর্যন্ত মাঝারি তাপপ্রবাহ বিরাজমান ছিল। ১৭ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত তীব্র ও অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বিরাজমান রয়েছে।জানা যায়, ১৭ এপ্রিল ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি, ১৮ এপ্রিল ৪০ ডিগ্রি, ১৯ এপ্রিল ৪১ ডিগ্রি, ২০ এপ্রিল ৪১.৬ ডিগ্রি, ২১ এপ্রিল ৪২ ডিগ্রি, ২২ এপ্রিল ৪০.৫ ডিগ্রি, ২৩ এপ্রিল ৪০.৩ ডিগ্রি, ২৪ এপ্রিল ৪১.২ ডিগ্রি, ২৫ এপ্রিল ৪০.৫ ডিগ্রি ও ২৬ এপ্রিল ৪২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।অপরদিকে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ঈশ্বরদীতে বেঁকে যাচ্ছে রেললাইন। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ঈশ্বরদী-রাজশাহী রেলরুটের ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশনের অদূরে রেললাইনের পাত বেঁকে যায়। প্রায় দুই ঘণ্টা রেললাইনের ওপর পানি ঢেলে তাপমাত্রা কমিয়ে পাত সোজা করার পর ট্রেন চলাচল শুরু হয়।পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের প্রকৌশলী বীরবল মন্ডল জাগো নিউজকে বলেন, লোহা অতিরিক্ত তাপে সম্প্রসারিত হয়। সেজন্য তাপমাত্রা বেশি হলে রেললাইন সম্প্রসারিত হয়ে বেঁকে যেতে পারে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে রেললাইন যেন সম্প্রসারিত হতে না পারে সেজন্য আমরা সবসময় দেখভাল করি। গত বৃহস্পতিবার ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশনের কাছে রেললাইন বেঁকে গিয়েছিল। পানি ঢেলে ঠান্ডা করে রেললাইন ঠিক করা হয়েছে। দেখভালের লোকজন নিয়োজিত থাকায় কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *