
জয়ন্ত রায়, বোচাগঞ্জ, (দিনাজপুর):
যদিও বাইবেলে যীশুর জন্মের কোন দিন ক্ষণ পাওয়া যায়নি। খ্রিস্টানদের বিশ্বাস মতে ২৫ শে ডিসেম্বর যীশুর জন্ম তারিখ ধরা হয়। … যিশু ছিলেন একজন ইহুদি ধর্মপ্রচারক। যিনি খ্রিস্টধর্মের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে গণ্য হন। বর্তমান পৃথিবীর বেশীর ভাগ রাষ্ট্রের প্রধান রাষ্ট্র ধর্ম খ্রীষ্টিয়ান হওয়ায় বিশ্বে ক্রিসমাস বা বড়দিনের অনুষ্ঠান সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হিসাবে পরিচিত । তাই বড়দিনের সময় এর তাৎপর্য বা প্রভাব সমগ্র পৃথিবীতে প্রভাবিত হয় । আমাদের বাংলাদেশে ২৫ শে ডিসেম্বর যথাযথ ভাবে বড়দিন পালন করা হয়। খ্রীষ্টিয় ধর্মালম্বীরা এই দিনে তাদের গীর্জাঘর বিভিন্ন রঙ্গিন বাতি ও রঙ্গিন কাগজ দিয়ে সাজিয়ে মুখরিত করে। বিভিন্ন নাচ-গান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে, বিভিন্ন স্বাদের খাবার তৈরী নিয়ে ব্যস্ততা ঘরে ঘরে। কোথাও দুস্থদের মাঝে শীতের বস্ত্রবিতরণের মধ্যে চলে যায় বড়দিন। কেউ কেউ নতুন কাপড় পরিহিত হয়ে ঘুরে বেড়ায়, বিভিন্ন দর্শনীয় স্হানে। তারা বিশ্বাস করে যে, এই দিনে সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর নিজেই এই জগতের উদ্ধারকর্তা হয়ে প্রভু যীশু রুপে জন্ম গ্রহণ করেন। তাই সকলে আনন্দের সাথে যীশুর জন্মদিন ধুমধাম করে পালন করে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সংস্কৃতি অনুযায়ী ক্রিসমাস বা বড়দিনের অনুষ্ঠান কি ভাবে পালন করা হয় তা হয়তো অনেকেই জানে না । বর্তমান ইন্টারনেটে প্রযুক্তির কল্যানে গুগলে সন্ধান করে আপনি অনেক তথ্য জেনে নিতে পারেন । কিন্তু বাংলাদেশে ক্রিসমাস বা বড়দিনের আমেজ ডিসেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বেশী দেখা যায়। বাংলাদেশে খ্রীষ্টানদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার মাত্র 0.0৪% থেকে 0.0৫% । তবে বাংলাদেশে বড়দিনের আমেজটি দেরীতে আসলেও অনুষ্ঠানে কিন্তু কোন কমতি নেই। কারন এটি একটি আর্ন্তজাতিক সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। এই সময় বাংলাদেশের সব গীর্জা সহ বড় বড় আন্তর্জাতিক হোটেলগুলিতে আলোকসজ্জ্বা করা হয়। এখন প্রথমে আসি আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে কথা । ভারতে মোট জনসংখ্যায় তুলনায় খ্রীষ্টানদের সংখ্যা খুবই কম । ভারতে সবচেয়ে বেশী বিভিন্ন সংস্কৃতির লোকের বসবাস। এখানে খ্রীষ্টানদের সংখ্যা কম হলে কোন কোন রাজ্যে বেশীর ভাগ লোক খ্রীষ্টান । যেমন, কেরালা, কর্ণাটক, অন্ধপ্রদেশ। এই দেশে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল এখানে আমগাছ বা কলাগাছ দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি তৈরী করে। ভারতে বড় বড় শহরে পশ্চিমা দেশে সংস্কৃতি অনুয়ায়ী ক্রিসমাস বা বড়দিন উদযাপন করে। নাইজেরিয়াতে ক্রিসমাসের সময় আমাদের দেশের মত বড় বড় শহর ছেড়ে তারা গ্রামের বাড়ীতে ছুটতে শুরু করে । এখানে তারা বড়দিনের সময় কেককে বেশী গুরুত্ব না দিয়ে তারা রান্না করে বিভিন্ন প্রকার পদের মাংস। ইটালীতে ক্রিসমাস বা বড়দিন শুরু হয় ডিসেম্বর মাসের ৮ তারিখ থেকে । এখানে ক্রিসমাস বা বড়দিন উৎসব চলে জানুযায়ী মাসের ৬ তারিখ পর্যন্ত। ইটালীতে ক্রিসমাস বা বড়দিনের সবচেয়ে মজার জিনিস হল এখানে ছোট ছোট বাচ্চারা বড়দিনে রাখাল সেজে পাইপ বাজিয়ে বাজিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বড়দিনের গান আর ছড়া কাটে যেটা আামদের বাংলাদেশেও গ্রামে ও শহরে কির্তন হিসাবে দেখা যায়। অষ্ট্রেলিয়াতে যখন ক্রিসমাস বা বড়দিন আসে তখন তাদের আবহাওয়া থাকে খুবই গরম । তাই ক্রিসমাস বা বড়দিনের সময় তাদের খাবার-দাবারে থাকে আলাদা বৈশিষ্ট। তারা এক বিশেষ ধরনের পুডিং খেয়ে থাকে । তাদের পুডিংএ বিশেষ এক ধরনের পুরুষ্কার থাকে আর সেটা হল সোনার টুকরা। যাদের ভাগ্য ভাল তারা ক্রিসমাস বা বড়দিনের সময় সেই সেরা পুরষ্কার পেয়ে থাকে। ফুটবলের দেশ ব্রাজিলেও ক্রিসমাস বা বড়দিনের সময় থাকে গ্রীষ্মকাল। কিন্তু গ্রীষ্মকাল হলে কি হবে সাজসজ্জ্বা কি থেমে থাকে? এখানে তুষার পড়ে না বলে অনেক সময় ক্রিসমাস ট্রির উপর তুলো দিয়ে বরফের মতো বানিয়ে রাখে। আর এখানে আরেকটি মজার জিনিস হয় আর সেটি হল ঘরবাড়ী সাজানোর প্রতিযোগীতা । মানে কে কত সুন্দর করে তাদের ঘর বাড়ী সাজাতে পারে । মেক্সিকোতে ক্রিসমাস বা বড়দিন পালন করে একটু অন্যরকম ভাবে । তারা যীশুর জন্মের কথা স্বরন করে শহরের মানুষ ৯ দিন ধরে বিভিন্ন মানুষের ঘরে ঘুরে বেড়ায় । এর কারন কি জানেন? আজ থেকে দুই হাজার বছর আগে মা মেরী শিশু যীশুকে নিয়ে দিনের দিনের পর দিন মানুষের ঘরে দরজা থেকে দরজা থেকে ঘুরে বেড়িয়েছিল, কিন্তু কেউ তাকে আশ্রয় দেই নি । এই ঘটনাটি তারা খুবই গুরুত্বের সহিত স্বরন করে। রাশিয়াতে একসময় খুব নাস্তিক লোকের সংখ্যা বেশী ছিল । তারপরে এক সময় রাশিয়াতে প্রচুর লোক খ্রীষ্ট ধর্মে দিক্ষিত হয় । রাশিয়াতে ক্রিসমাস বা বড়দিন পালন ডিসেম্বর মাসে করা হয় না । এখানে ক্রিসমাস বা বড়দিন পালন করা হয় জানুয়ারী মাসের ৬ তারিখে। এখানে মজাটা আরো বেশী হয় কারন নিউ ইয়ার ও বড়দিন এক সাথে পালন করা হয় তাই মজাটা আরো বেশী হয়। পৃথিবীর ক্ষমতাধর দেশ আমেরিকাতে ক্রিসমাস বা বড়দিনের আগের দিন সব বাচ্চারা সুন্দর সুন্দর স্টকিংস ঝুলিয়ে রাখে যেখানে সেখানে উদার ব্যক্তিবর্গ উপহার রেখে যাবেন। আর এরপর তারা সকালে উঠে উপহার পাবার লোভে জলদি জলদি ঘুমাতে চলে যায় । আসলে বাচ্চাদের এটা করার মূল কারন হল তারা বিশ্বাস করে যে, বিশাল ঝোলা ভর্তি চকলেট, ক্যান্ডি আর নানা রকমের উপহার নিয়ে এসে তাদের স্টকিং আর ক্রিসমাস ট্রির নিচে রেখে যাবেন । সংস্কৃতি ও ফ্যাশনের দেশ ফ্রান্স দেশে সবাই ক্রিসমাস ট্রিকে পুরানো ধাঁচের সংঙ্গে সাজাতেই বেশী ভালবাসে। তারা তাদের ক্রিসমাসের ট্রির উপর লাল রঙের রেবন মুরিয়ে তার সঙ্গে সাদা মোম বাতি দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি সাজায়। পর্তুগালে ক্রিসমাসের অনত্যম আর্কষন হলো ক্রিসমাস ফাদারের আনা উপহার।
সংগৃহীত : গুগল