
মুহম্মদ তরিকুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিনিধি (পঞ্চগড়) : পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় প্রায় সকল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গর্ভকালীন এন্টি নেটাল কেয়ার(এএনসি) কার্ড নিতে চিকিৎসককে নগদ টাকা দিতে হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার ভজনপুর ডাঙ্গাপাড়া ও বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক (এফডব্লিউভি) রোকশানা বেগম এবং শাহনাজ পারভীন অপদিকে দেবনগড় ইউনিয়নের সতরমগছ কমিউনিটি ক্লিনিক হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সার্টিফিকেশনার (সিএইচসিপি) রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখতে ও জানতে পারা যায়, চেকাপ ছাড়াই টাকার বিনিময়ে মিলে এন্টি নেটাল কেয়ার (এএনসি) কার্ড। উপজেলার প্রায় অফিসগুলোতে সেবা নিতে আসা মহিলাদের কাছ থেকে অপেন সিক্রেটে নেয়া হচ্ছে ১৫০ থেকে ৪০০ টাকা করে। দেখার কেউ নেই! মনে হয়, উপজেলার সকল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিকে একই ধারাবাহিকতায় কালো টাকা আদায়ের ধুম নেমেছে। জানা যায়, উপজেলার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের অফিসের সকলে মিলেই এইসব টাকা আদায় করছেন কেউ কারো দোষ দিচ্ছেন না। রোববার (১৫ জানুয়ারি) থেকে এই টাকা লেনদেনের ঘটনা ঘটে আসছে। আরোও জানা যায়, যাদের দুই এর অধিক ছেলে-মেয়ে রয়েছে তাঁরাও মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির আওতায় আবেদন করছেন।
এদিকে ডাঙ্গাপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের আয়া এবং এফডব্লিউভি রোকশানা বেগম মিলে এএনসি কার্ড প্রদানে প্রত্যেকের কাছে ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা, বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) শাহনাজ পারভীন ২০০ থেকে ৪০০ টাকা এবং দেবনগড় ইউনিয়নের সতরমগছ কমিউনিটি ক্লিনিক হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সার্টিফিকেশনার (সিএইচসিপি) রফিকুল ইসলাম ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডাঙ্গাপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সেবা নিতে আসা কয়েকজন মহিলা বলেন, আমরা কার্ড নিতে আসছি। কার্ড নিতে অনেকের হাতে টাকা দেখা যাচ্ছে। আমাদেরকেও টাকা দিতে হবে। সোমবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে ভজনপুর পুরাতন পরিষদের সামনে ডিজিটাল সেন্টারে অনলাইন করতে আসা গিতালগছ গ্রামের এক মহিলা জানান, টাকা নিতে বলে নিষেধ আছে। তবুও আমার কাছ থেকে ১৫০টাকা নিয়েছে, ১০০টাকা দিলে রাগ করে, বলেন এত লেখালেখি করে দিচ্ছি ১০০ টাকা কোন বিবেকে দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেবনগড় ডিজিটাল সেন্টারে অনলাইন করতে আসা এক মহিলা জানান, আমার কাছ থেকে ৪০০টাকা নিয়েছে। যার কাছে যেমন পাই তার কাছে তেমন নিচ্ছে। অপরদিকে বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গর্ভকালীন সেবা কার্ড নিতে আসা এক মহিলা জানান, আমি দুইশ টাকা দিয়েছি। সবার কাছ থেকেই টাকা নেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে ডাঙ্গাপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শকা (এফডব্লিউভি) রোকশানা বেগম ও ওই অফিসের আয়া বলেন, রোববার (১৫ জানুয়ারি) সকাল থেকে সাংবাদিক আসা পর্যন্ত ৮/১০জন সেবা গ্রহনকারী মহিলার কাছ থেকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে আদায় করেছেন। পরে সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে সাংবাদিককে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শকা (এফডব্লিউভি) শাহনাজ পারভীন বলেন, যার কাছে যেমন পাচ্ছেন আদায় করছেন। কেন এই টাকা নেয়া হচ্ছে প্রশ্নোত্তরে বলেন, কারো বয়স না হলে বা কারো বেশি বয়স হওয়ার কারণে এই টাকা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে দেবনগড় ইউনিয়নের সতরমগছ কমিউনিটি ক্লিনিক হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সার্টিফিকেশনার (সিএইচসিপি) রফিকুল ইসলাম বলেন, কেউ খুশিতে দিলে নেয়া হচ্ছে। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মা ও শিশু কর্মসূচির আওতায় আবেদন করতে হলে আবেদনকারীকে অবশ্যই ৪-৬মাসের গর্ভাবস্থায় এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা/পরিবার পরিকল্পনা প্রদত্ত এএনসি কার্ড থাকতে হবে। একজন আবেদনকারীকে অনলাইনে আবেদন প্রতিমাসের ১-২০ তারিখের মধ্যেই করতে হবে। এ বিষয়ে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সবুজ রায় বলেন, গর্ভকালীন এন্টি নেটাল কেয়ার(এএনসি) কার্ড প্রদানে টাকা আদায় সম্পূর্ণ অবৈধ। তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন জানিয়েছেন।