Subscribe our Channel

শাট -ডাউনে নিম্ন আয়ের মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই

 রংপুর বিভাগীয় ব্যাুরো প্রধান ফিরোজ মাহমুদ :

রংপুর শহরের বেতপট্টি মোড়,গনেশপুর ক্লাবের সামনে, টার্মিনাল চৌরাস্তা মোড়,নজিরের হাটে,ভোর ৬ থেকে সকাল ১০ পর্যন্ত হাতে ঢালি কোদাল নিয়ে বসে কিংবা দাঁড়িয়ে কাজের অপেক্ষায় শত-শত দিনমজুর শ্রমিক।এরা প্রতিদিন শ্রম বিক্রি করতে এসব জায়গায় বসে চাতক পাখির মতো তাকিয়ে থাকে কাজের অপেক্ষায়।

 

 

 

দেশব্যাপী শাট-ডাউন চলছে ফলে এসব দিন মজুর মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। এইসব দিনমজুর শ্রমিক পরিবারের ঈদের আনন্দ দুরের চিন্তা, করোনা কালীন সময়ে তাঁরা দুবেলা দুমুঠো ভাত খাবার নিয়ে তাদের চিন্তার শেষ নেই।

 

 

 

গতকাল শনিবার সকালে নজিরের হাটে গিয়ে দেখা গেল, দিন মজুর শমসে আলীকে কাউকে সামনে দেখলেই চাতক পাখির মতো ছুটছেন তার কাছে। শুধু শমসের নন, তার মতো আরও ১০-১২ জন দিনমজুর কাজের আশায় অপেক্ষা করছিলেন। টার্মিনাল বটতলা মোড়ে কাকডাকা ভোরে এমন চিত্র দেখা যায়। লকডাউনে সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষই কিছু না কিছু দুর্ভোগে পড়েন। তবে সবার সমস্যা এক রকম নয়।

 

 

৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে। দরিদ্র মানুষগুলোর মধ্যে দিনমজুর শমসের আলী প্রতিবেদককে বলেন, ‘কামের (কাজ) আশায় দাঁড়ে আছি।যে কোনো একটা কাম দ্যান চাচা । কাম না করলে খামো কি? পরিবার চালামো ক্যামন করি? কাম না থাকলে পেটে ভাতও নাই।

 

 

লকডাউনে হামার মতো গরিব মানুষের মাথায় হাত পড়ছে।বাড়ী ঘরের ছোট্ট খাটো কাজ করেন ৮/১০ জন শ্রমিক। সেখানকার শ্রমিক আতিয়ার রহমান বলেন, ‘লকডাউনে শউগ বন্ধ থাউক হামরাও চাই কিন্তু ঘরোত খাবার দিয়া তারপর লকডাউন শুরু করুক সরকার। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কিছু করার নেই। কোনো উপায়ও নেই। ঈদের আগে আয় রোজগার করব্যার না পাইলে পরিবারের কাউকে কিছু দিবার পাবার নেই।

 

 

এরায় চেয়ে আর দুর্ভাগ্য কি হবার পারে হামার। মধ্যবয়সী রিকশাচালক বেলাল মিয়া বলেন, দিন আনি, দিন খাই । যেদিন কামাই নাই, সেদিন খাওয়াও নাই- ঠিক এমনই অবস্থা। করোনার সময় রিকশা চালাবার পারতোছিনা বলেই কিছু আয়-উপার্জন হইতোছেনা। মনে হয় না খেয়ে মরা লাগবে। রাস্তায় লোকজন নাই।

 

 

তাই ভাড়াও নাই। সরকারি সাহায্য পাইলে ভালো হতো। কোনো মতে খেয়ে পড়ি দিন কাটাই নো হয়।বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন রবিউল ইসলাম। তার কষ্টটাও অনেকটা একই। ৭ দিন কাজ না-করলে বেতন কাটা যাবে।

 

এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে তারও অনেক কষ্টে দিন কাটাতে হবে বলে জানান তিনি। রবিউল বলেন, সরকারি কর্মকর্তা – কর্মচারীদের তো আর কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হলো আমাদের মতো বেসরকারি কর্মচারীদের। যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়।ফুতফাতে চকিতে চায়ের দোকানি ইসমাইল হোসেনের দুশ্চিন্তায় ঘুম হারাম হওয়ার মতো অবস্থা। দোকান না-চললে রংপুর মহানগর এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা খুবই কঠিন। তাই তিনি ত্রাণের আশায় আছেন। ইসমাল বলেন, ত্রাণ কপালে জুটলে খাওয়া জুটবে।

 

 

 

নয়তো কোনোমতো অনাহারে – অর্ধাহারে দিন কাটাতে হবে। কথা হয় ভ্রাম্যমাণ বিভিন্ন পণ্যের দোকানিদের সঙ্গে। তারাও হতাশা আর শঙ্কার কথা জানান। ঝালমুড়ি বিক্রেতা মতিন মিয়া বলেন, আগে স্কুল-কলেজের সামনে ঝালমুড়ি বানিয়ে বিক্রি করতাম। এখন সেগুলো বন্ধ হওয়ায় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বিক্রি করি। এ কাজের ওপর নির্ভর করে বাসায় থাকা বৃদ্ধ মা-বাবাসহ ছয়জনের জীবন। মানুষজন ঘর থেকে বের না-হলে বিক্রি করব কার কাছে। বড়ই কষ্টে আছি।ডালানিয়ে রাস্তার ধারে পান-বিড়ি বিক্রেতা রবিউল মিয়ারও কষ্ট একই রকম।মানুষ রাস্তায় বের না হলে খাবে কী, তাই নিয়ে সে চিন্তিত। রবিউল বলেন, ঘরে মা ও তিন ভাই-বোন রয়েছে।

 

 

 

 

মা অন্যের বাসাবাড়িতে গৃহস্থালি কাজ করেন।রবিউল ও তার মায়ের উপার্জন দিয়েই চলে তাদের পরিবার। লকডাউনে তার আয় অর্ধেকে নেমেছে। রাস্তায় লোকজন কম বলে বিক্রি কম হচ্ছে। এ দুঃসময়ে অন্যের সাহায্যের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই বলে জানান তিনি।সিটি বাজার এলাকায় থাকা দিনমজুর রমজান আলী বলেন, বাজারে লোকজন এলে তাদের বাজার-সদাই বাসায় পৌঁছে দেই। তাতে ১০-১৫ টাকা করে দেয়। সারা দিন এভাবে কাজ করে যা পাই, তা দিয়েই চারজনের সংসার চালাই।

 

 

 

কোনো ব্যবসা করব যে সে টাকাও নেই। বাধ্য হয়ে দিনমজুরের কাজ করি। কিন্তু লকডাউনে কাজের সুযোগ অনেক কমে গেছে। হামার মতো গরিবের দিকে তাকানোর লোক কই?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *