Subscribe our Channel

বিলুপ্তির পথে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী তালগাছ

মুহম্মদ তরিকুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

 

কথায় আছে “তালগাছ মানেই গ্রামের ঐতিহ্য, বাংলার ঐতিহ্য।” আকাশ ছুঁই ছুঁই সারি সারি তালগাছ সেই আদিকাল থেকেই গ্রাম-বাংলার শোভা বৃদ্ধিতে অকৃত্রিমভাবে ভূমিকা রেখে চলেছে। তারই ধারাবাহিকতায় ১ জুলাই ২০২১ বৃহস্পতিবার বিকেলে পঞ্চগড় জেলাধীন তেঁতুলিয়া উপজেলার ৬নং ভজনপুর ইউপি’র ভুতিপুকুর গ্রামে দেখা মিলে প্রায় ৩যুগ বয়সী দুটি তাল গাছের।

 

 

সরেজমিনে গিয়ে জানাযায়, ওই গ্রামের মৃত সাকাতুল্লার ছেলে মফিল উদ্দিনের বাড়ির পিছনে একটি ও আরেকটি মনটু নামের ব্যক্তির বাড়ির পাশে এই তালগাছ দুটি প্রায় ৩যুগ ধরে রয়েছেন।

 

 

গ্রামের আজিজুলের ছেলে আব্দুর রউফ ওরফে বকুলের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, এই তালগাছ দুটি তিনি বুঝভর থেকে দেখছেন। তিনি বলেন, উপজেলায় খোঁজ নিলে আপনারা সাংবাদিক ভাইয়েরা ১০টি তালগাছ খুজে পাবেন না, তালগাছের কদর এখন নেই। কয়েক যুগ আগে সারি সারি তালগাছ দেখে মানুষের মনও জুড়াতো।

 

 

 

গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য রক্ষায় এবং শোভা সৃষ্টিতে যে তালগাছের জুড়ি মেলে না সেই তালগাছ আজ প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। নিকট অতীতেও যে তালগাছ শোভা ছড়াতো গ্রাম-বাংলায়, মন জুড়াতো মানুষের আর ভারসাম্য রক্ষা করতো প্রকৃতির, সেই তালগাছ নিকট ভবিষ্যতে চোখে তেমন পড়ে না বলে মনে করেছেন প্রবীণ এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা।

 

 

 

বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রক্ষায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায় নানান পদক্ষেপ গ্রহণ চোখে পড়ার মত হলেও গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যেও বাহক নানা উপকারী এই তালগাছ রক্ষায় তেমন পদক্ষেপ না থাকায় ক্রমেই এটি বিলীন হতে চলেছে। স্থানীয় সূত্রে এক সময় পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন জেলা এবং উপজেলার গ্রামের আনাচে-কানাচে এবং বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কের পাশে সারি সারি তালগাছ শোভা পেতে দেখা গেছে।

 

 

 

কিন্তু সে দৃশ্য আর চোখে পড়ে না। এখন হঠাৎ কোন গ্রামের ঝোপ জঙ্গলের পাশে দু-একটি তালগাছ এখন চোখে পড়ে। সে সব আবার কারো লাগানো নয় এমতিতেই ঝোপ জঙ্গল বেড়ে উঠেছে। কেউ তাল খেয়ে বীচি ফেলে রেখে গেছে সেই বীচি থেকেই মূলত হয়ে উঠেছে এসব তালগাছ।

 

 

 

অতীতে অপরিচিত মানুষদের বাড়ি, পুকুর, মাঠ, মসজিদ, মাদ্রাসা ও স্কুলসহ বিভিন্ন স্থান চেনানোর জন্য বলা হত উঁচু ওই তালগাছটার পাশে। এমনকি সরকারি-বেসরকারি কাজে নানান দিক নির্দেশনার ক্ষেত্রেও তালগাছের সহায়তা নেয়া হত। তালের পিঠা, তালের গুড়, তালের আঁটি ও তালের রস সব মানুষের নিকট খুব মজাদার খাবার।

 

বিশেষ করে তালের পিঠা দিয়েই অতীতে জামাই বাড়ী, মেয়ের বাড়ী, বেয়াই বাড়ী, শ্বশুর বাড়ীসহ নানান আত্মীয়তার বন্ধন রচিত হত। অতীত সময়গুলোতে তালপিঠা ছাড়া গ্রাম-গঞ্জে আত্মীয়তা কল্পনাই করা যেত না। এ ছাড়াও তালগাছের পাতায় তৈরী করা হয় নানা ডিজাইনের হাতপাখা। কিন্তু গ্রাম-বাংলা থেকে ক্রমেই তালগাছ হারিয়ে যাওয়ায় গ্রামীণ পরিবারগুলোতে নেই সেই তালপিঠার আত্মীয়তা, নেই জামাই আদর আর কন্যা বরণ।

 

 

 

 

তালগাছের এসব ঐতিহ্যগত দিক ছাড়াও গাছের গুল দিয়ে কাঁচা ও পাকা ঘরের তলার(ছাদ) তীর করা হয়ে থাকে। ঘরের তালায়(ছাদ) বাঁশের তীরের চেয়ে তালগাছের তীর অনেক মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।

 

 

গ্রামের মানুষ জনেরা জানান, তালগাছের এসব উপকার ও ঐতিহ্যগত দিক ছাড়াও গ্রাম-বাংলার সব শ্রেণি-পেশার মানুষের বহুমুখী কাজে লাগে তালগাছ।

 

 

কিন্তু অযত্ন, অবহেলা ও গুরুত্বের অভাবে তালগাছ এখন হারিয়ে যাচ্ছে। ইতোপূর্বে বজ্রপাত রক্ষার্থে তালগাছ লাগানোর কথা উঠলেও এক শ্রেণির মানুষ তা তোয়াক্কা করছে না। তাই এখনও সময় আছে হারিয়ে যাওয়া তালগাছ গুলোকে রক্ষা করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *