ছাত্রাবস্থায় ছাত্ররাজনীতিতে ছিলেন জরিত। ছয় দফা, উনসত্তুর এর গনঅভ্যুথ্যান ও সর্বশেষ বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা দিয়ে তৎকালীন পীরগঞ্জ এলাকায় গড়ে তুলেছিলেন গেরিলা বাহিনী। ছিলেন যুদ্ধ কালীন কমান্ডার। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় এর জেলা কমান্ডার এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল এর সমাজ কল্যাণ সম্পাদক ছিলেন।
পচাত্তরের ১৫ই আগস্টের নির্মম হত্যাকান্ডের পরে জিয়াউর রহমান যখন শাহ আজিজুর রহমানের মতোন কুখ্যাৎ রাজাকারকে প্রধানমন্ত্রী বানাতে চাইলেন তখন মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কাউন্সিল এর যেক’জন বীর মুক্তিযোদ্ধা তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন তাঁর মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আব্দুল আজিজ একজন। বহু প্রলোভনের মধ্যেও থেকেছেন অনর। জীবদ্দশায় প্রচন্ড প্রতাপশালী এই ব্যাক্তিকে কোনদিন ক্ষমতার অপব্যাবহার বা অন্যায় করতে দেখিনি। যারা পীরগঞ্জের রাজনৈতিক ইতিহাস সম্পর্কে খানিকটা সচেতন তারা জানেন নির্বাচিত কোন পদ্ধতির মধ্যে তিনি না গিয়েও জন মানুষের কল্যানে তিনি কিভাবে নিজের প্রভাব রাখতেন। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে দেখেছি কিভাবে সুবিধা বঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তিনি কাজ করেছেন।
নিজের বাবার জমি বিক্রি করে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য করেছেন মুক্তিযোদ্ধা পাড়া(ডাক বাংলা মাঠ সংগলগ্ন), পীরগঞ্জে আজ যে সমবায় মার্কেট দেখছেন তাও তার হাতে গড়া। এরকম অসংখ্য জনকল্যানমুখি কাজ তিনি করেছেন নিরবে। সুজোগ থাকলেও সন্তান-সন্তদির জন্য কিছুই করেন নাই।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক থাকাকালীন ঢাকায় সুবিধাবঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধাদের পূনর্বাসনের দায়িত্বে ছিলেন তিনি, নিজ হাতে বিলিয়েছেন বহু জমি, বহু ফ্লাট। কিন্তু নিজের জন্য বা নিজের পরিবারের জন্য কিছুই রাখেন নাই বা সুযোগ গ্রহণ করেন নাই। এমনকি তার মৃত্যু হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কাজ করার সময় পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহীর কক্ষে।
২০০৫ সালের ১৯ এপ্রিল আজকের এই দিনে নানুর মৃত্যু হয়েছিল। সাধারনত কারো মৃত্যুতে আমার চোখে জল আসতো না। এই প্রথম আমি কেদেছিলাম। বুঝেছিলাম স্বজন হারানোর কষ্ট, দুঃখ। পারিবারিক ভাবে এবং ব্যাক্তিগতভাবে আমি খুবই গর্বিত এই বীর যোদ্ধা এবং একজন ভাল মানুষের সংস্পর্শ আসতে পারায়। মৃত্যুর আগের দিনেও আমি এবং নানু দুপুরে এক সাথে খেয়েছিলাম। মুহুর্তটা বারবার স্মৃতিতে নাড়া দেয়। চোখের সামনে স্মৃতিগুলো জলজ্যান্ত। মৃত্যু দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি নানু ❤ ❤