
আল ফয়সাল অনিক,ঠাকুরগাঁওঃ
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়ায় যৌতুকের দাবির টাকা না পেয়ে এক স্বামী তার স্ত্রীর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতনের শিকার ঐ গৃহবধূ নিজে বাদী হয়ে তাঁর স্বামী সুমন সেনসহ ৪জনের বিরুদ্ধে রুহিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়,১০ বছর পূর্বে বিবাদী ধনঞ্জয় সেন এর পুত্র সুমন সেনের সাথে পূর্ণিমা রানী সেন এর পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর হতে বিবাদী গণ পূর্ণিমা রানীকে তার বাবার বাড়ি থেকে যৌতুকের টাকা নিয়ে আসতে চাপ দিতে থাকে। এতে পূর্ণিমা রানী টাকা আনতে অস্বীকার করলে রুহিয়া থানাধীন কশালগাঁও গ্রামের বিবাদী ধনঞ্জয় রায় এর ছেলে ১। সুমন সেন(৩২), ধনঞ্জয় সেন এর স্ত্রী ২।
বেনু রানী সেন(৫০),মৃত-দিগেন্দ্রনাথ সেন এর ছেলে ৩। ধনঞ্জয় সেন(৬০) প্রায় তার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে।এক পর্যায়ে বিবাদীগণের টাকার বেশি দরকার হলে বিবাদী রুহিয়া থানাধীন মন্ডলাদাম গ্রামের অগ্রায়ন রায়ের মেয়ে ৪। নিপা রানী(১৬)কে যৌতুক নিয়ে বিয়ে করে বাড়িতে আনে এবং তাকে নিয়ে সংসার করতে থাকে।
কিন্তু উক্ত বিবাদীগণের টাকার পূনরায় টাকার দরকার হলে গত ৪জুলাই২০২১ইং তারিখে পূর্ণিমা রানীকে বাবার বাড়ি হতে আবারো টাকা আনতে বলে। পূর্ণিমা টাকা আনতে অস্বীকার করলে সকল বিবাদীগন মিলে তাকে বাঁশের লাঠি দিয়ে এলোপাথারী মারপিট করে শরীরে বিভিন্ন স্থানে জখম করে। এই বিষয়ে ইউপি সদস্য ঠাকুর চন্দ্র সেন বিকাশ ও স্হানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি রবীন চন্দ্র সেন বলেন, সুমন ও তার সহধর্মিণী পূর্ণীমা সেনের মাঝে অনেক দিন থেকে বাকবিতন্ডা চলতে থাকে।
মাস কয়েক আগে ১ম স্ত্রীকে না জানিয়ে সুমন গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করে। আমরা স্থানীয় ভাবে বেশ কয়েকবার সমাধানের চেষ্টা করেছি। কিন্তু এতে কোন ফায়দা হয়নি। পরবর্তীতে পূর্ণিমার উপর বেরে যায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। রবীন চন্দ্র সেন আরও জানান, সুমন ও তার পরিবার প্রথম বউকে বাসায় না রাখার কৌশল অবলম্বন করছে। সুমনের এমন ব্যবহারে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। আমরা প্রশাসনের কাছে দ্রুত এর সমাধান চাই।
গৃহবধূ পূর্ণিমা রানী সেন জানায়, বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য আমার শ্বশুর বাড়িতে আমাকে স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ী একত্রে বিভিন্ন কৌশলে নির্যাতন করতে থাকে। তাদের এই অমানবিক নির্যাতনে এক এক করে আমার গর্ভে থাকা দুইটি সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। টাকার জন্য আমার স্বামী আমাকে না জানিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করে।
আর দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকে আমার উপর তার পরিবারের নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। এই বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্য লোকজনকে বিষয়টি অভিযোগ করলে তারা একাধিক বার বৈঠক করে আমার স্বামীকে সাবধান করেন। কিন্তু এতে কোন ফল পাওয়া যায়নি। উল্টো আমার উপর স-পরিবারে শারীরিক ভাবে নির্যাতন করতে থাকে।
আমি প্রতিবাদ করলে আমার স্বামী সুমন সেন আমাকে বাঁশের লাঠি দিয়ে প্রহার করে। ঘটনা স্থল থেকে গ্রামবাসীরা আমাকে উদ্ধার করে প্রথমে পার্শ্ববর্তী আটোয়ারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভতি করেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
ঘটনার বিষয়ে সুমন সেন ও ধনঞ্জয় সেনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে বাসায় গিয়ে খোঁজ খবর নিলে তার শ্বাশুড়ী বেনু রানী অসুস্থতার অজুহাতে বিষয়টি এরিয়ে যায়।
রুহিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ চিত্ত রঞ্জন রায় জানান,পূর্ণিমা রানীর মামলার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্হা গ্রহন করা হবে।