Subscribe our Channel

প্লাটিলেটে চড়া খরচ, ডেঙ্গুর চিকিৎসায় পকেট ফাঁকা

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় ব্যস্ত সরকারি হাসপাতালগুলো। ২৪ ঘণ্টাই চলছে জরুরি সেবা। এরমধ্যে অনেক ক্রিটিক্যাল রোগীর প্রয়োজন হচ্ছে আইসিইউ। অধিকাংশ রোগীরই প্রয়োজন হচ্ছে ভর্তি হওয়া। তবে সাধারণ বেড এবং আইসিইউ খালি না থাকায় অনেককেই রেফার করা হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালে। এতে চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ।অনেকে বলছেন, সরকারি হাসপাতালে দীর্ঘ লাইন ধরা বা অসুস্থ রোগীকে নিয়ে দূরের হাসপাতালে না যেতে পেরে আশপাশের বেসরকারি হাসপাতালে যাচ্ছেন অনেকে। ফলে কয়েকদিনেই খরচ হচ্ছে লক্ষাধিক টাকা।রাজধানীর কল্যাণপুরের বাসিন্দা হাসিনা বেগম। ৩০ বছর বয়স তার। দুই ছেলের জননী। গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে জ্বর। দুই দিন পর জ্বরের প্রকোপ বাড়ে। শরীর দুর্বল হয়ে পড়ায় নেওয়া হয় নিকটস্থ ইবনে সিনা হাসপাতালে। পরীক্ষার ফলাফলে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। অন্যদিকে প্লাটিলেট কাউন্টও নেমে আসে ১০ হাজারের নিচে। সে সময় আইসিইউতে নেওয়ার কথা জানায় হাসপাতাল।

সেখানে আইসিইউ না থাকায় নেওয়া হয় ধানমন্ডির আরেকটি হাসপাতালে। সেখানে তিন দিন থাকেন আইসিইউতে। পরে দেওয়া হয় বেডে।এ যাত্রায় প্রাণে বেঁচেছেন হাসিনা বেগম। তবে এরই মাঝে চলে গেছে পরিবারের ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ইবনে সিনায় চিকিৎসক দেখানো এবং বিভিন্ন টেস্টের পেছনে প্রাথমিকভাবে কিছু টাকা খরচ হয়। এরপর আইসিউ এবং প্লাটিলেট ম্যানেজ করা, সব মিলিয়ে খরচ হয় এই বিশাল অংকের টাকা।বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নেওয়া একাধিক রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এমনই খরচের কথা জানা যায়। অন্যদিকে, সরকারি হাসপাতালেও যাদের দীর্ঘ মেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন হচ্ছে, তাদেরও খরচ লাখের ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে।কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাসপাতাল খরচের পাশাপাশি একটা বড় পরিমাণ টাকা প্লাটিলেটের পেছনে ব্যয় হচ্ছে। সাধারণভাবে প্লাটিলেট নেওয়ার যে পদ্ধতি সেখানে ৪ জন ডোনারের রক্ত থেকে এক ব্যাগ প্লাটিলেট নেওয়া যায়। যেটার সরকারি হাসপাতালে খরচ ৩ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। বেসরকারি ব্লাড ব্যাংকগুলোতে বর্তমানে নিচ্ছে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। অন্যদিকে প্লাটিলেট এফেরোসিস পদ্ধতিতে একজন থেকেই ১ ব্যাগ প্লাটিলেট নেওয়া যায়। তবে এ পদ্ধতিতে নেওয়ার জন্য যে কিট প্রয়োজন তার সংকট দেখা দিয়েছে। এ পদ্ধতিতে কিটসহ সব মিলিয়ে প্রায় ১৮ থেকে ২২ হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে রোগীদের।প্লাটিলেটের খরচের বিষয়ে জানতে চাইলে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা জানান, এখানে সাধারণ পদ্ধতিতে প্রতিব্যাগ প্লাটিলেটের জন্য ৪ হাজার ২০০ টাকা ও প্লাটিলেট এফেরোসিস পদ্ধতিতে ১৮ হাজার টাকা নেওয়া হয়।এছাড়া মোহাম্মদপুর রেড ক্রিসেন্ট ব্লাড ব্যাংকের ইনচার্জ জাহিদুল ইসলাম   জানান, আমাদের কাছে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৩ ব্যাগ প্লাটিলেট নেওয়ার জন্য অনুরোধ আসে। তবে নানান সংকটে অনেক সময় আমরা প্লাটিলেট দেওয়া বন্ধ রাখি। যেমন গত ৩ মাস ধরে আমরা প্লাটিলেটের কিট সংকটে আছি। বাড়তি দাম দিলে তবেই মিলে এই কিট। আমাদের কাছে যখন কিট এসে পৌঁছায়, আমরা আবারও কাজ শুরু করি। এ মূহুর্তে পূর্বের তুলনায় সংকট কিছুটা কমেছে । অন্যদিকে চড়া খরচের মাঝে সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীদের চাপ আরও বাড়ছে।কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক কর্নেল ডা. শেখ সাব্বির  জানান, প্রতিদিন ইমার্জেন্সিতে ৭০০ থেকে ৮০০ রোগী ডেঙ্গু সন্দেহভাজন হিসেবে আসছে। তার মাঝে প্রায় ৪০ শতাংশেরই ডেঙ্গু পজিটিভ হচ্ছে। এদের মাঝে ভর্তি হচ্ছে ১০ শতাংশ। রোগীদের চাপ সামলাতে কঠিন অবস্থায় পড়তে হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *