
মারুফ সরকার, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : সুগন্ধি চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি কটকটি। একে গুড় বা চিনির ঝোলে ডুবালেই হয় দারুণ মিষ্টি। বগুড়ার ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়ে তৈরি অতুলনীয় স্বাদের এই কটকটির চাহিদাও ব্যাপক। মহাস্থান গড়ে বেড়াতে এসে কেউ এই কটকটির স্বাদ নেয়নি বা কিনেননি এমনটি ভাবাও দায়। ফলে মহাস্থানগড়কে ঘিরে গড়ে ওঠা শতাধিক দোকানে বছরে অন্তত ৪০ কোটি টাকার এই পণ্য বেচাকেনা হয়।ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঐতিহাসিক মহাস্থানগড় ঘিরে গড়ে ওঠা কটকটির দোকানকে কেন্দ্র করে ৫ শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৪০ শতাংশ নারী শ্রমিক রয়েছেন। তারা কারখানায় কাজ করেন। মূলত কটকটি তৈরিতে এখানে নারীদের অবদানই বেশি বলে ব্যবসায়ীরা মনে করেন।তারা আরো জানান,শুধু মহাস্থান নয় উত্তরের সকল জেলায় ফেরি করে বিক্রি হয় মহাস্থানগড়ের ঐতিহ্যবাহী কটকটি।হঠাৎ সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের নিমগাছী বাজারে দেখা যায় মহাস্থানগড়ের কটকটি কাধে নিয়ে ফেরি করে এক ভদ্রলোক বিক্রি করছেন এই কটকটি।কথা হয় ভ্রাম্যমাণ এই মহাস্থানগড়ের কটকটি বিক্রেতা আব্দুর রাজ্জাক(৫৫) সাথে। তিনি জানান,মহাস্থানের ভবানীগঞ্জের হাট নাইরি পাড়া এলাকায় তার বাসস্থান। ৩০-৩৫বছর ধরে এই ঐতিহ্যবাহী মহাস্থানগড়ের কটকটি বিক্রি করেই চালাচ্ছেন সংসার।স্ত্রী আর ১ ছেলে রেয়েছেন তার সংসারে। আর এই ব্যবসা করেই তিনি ২ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন।বয়স হলেও জীবিকার তাগিদে তাকে এই কটকটি বিক্রি করেই চলতে হয়।তিনি আরো জানান, গত ২ বছর পূর্বে দ্রব্য মূল হ্রাস ছিলো।
তখন সবাই কটকটি কিনতো।এখন কটকটি তৈরির সকল উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় কটকটির দাম ও বেড়েছে। তাই আগের মতো আর বেচাকেনা তেমন হয় না।বর্তমানে তিনি উত্তরবঙ্গের প্রায় সব জেলার হাটে বাজারে ফেরি করে মহাস্থানগড়ের কটকটি বিক্রি করছেন।এক কেজি কটকটি তিনি খুচরা বিক্রি করছেন ২৫০টাকা কেজি দরে। আর দিনে ১৫-২০কেজি কটকটি বিক্রি করেন তিনি।এতে প্রতিদিনে খরচ বাদে গড়ে ৭০০-৮০০টাকা ইনকাম করেন।আর এ অর্থেই চলে তার সংসার। তিনি আরো জানান,কটকটি বিক্রির সাথে সাথে আমি উত্তরের জনপদের সাথে পরিচিত হয়ে গেছি।আমার জন্য অনেক ক্রেতারা অপেক্ষা করেন। আমাকে না পেলে অনেকে ফোন দিয়েও খোঁজ খবর নেন।উল্লেখহ বগুড়ার দইয়ের মতোই সারাদেশে সমাদ্রিত মহাস্থানের কটকটি উনিশ শতকের দিকে গুড়ের তৈরি মিষ্টান্নজাতীয় খাবারের যাত্রা শুরু হয়ে আজও তার ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। এখানকার পর্যটকদের কাছে এবং এলাকার ছোট-বোড় সকলের কাছে খাবারটি বেশ জনপ্রিয়। বর্তমানে খাবারটির সুনাম দেশ থেকে বিদেশেও ছড়িয়েছে।