
মোঃ তোতা মিয়া :
মঘল যুগের আমলের স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম এক নিদশন পঞ্চগড় আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর শাহী মসজিদ।পঞ্চগড় জেলা সহর থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের অবস্থিত মসজিদটি।আনুমানিক ৩৬৫ বছর পূর্বে স্থাপিত মসজিদটি নির্মাণ শৈলীর নিপুণতা ও দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য এখনও দর্শন নাথীদের নজর কাড়ে।ইসলামিক টেরাকোটা, ফুল লতাপাতার কারুকার্য খোদাই করা আছে মসজিদটির দেওয়াল জুড়ে।আর মসজিদের সামনে আয়তকার টেরাকোটার কারুকার্য গুলো একটির সঙ্গে আরেকটি কোন মিল নেই। মসজিদের দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট প্রস্থ ২৫ ফুট।
একই সারিতে আছে ৩টি গম্বুজ। সামনে আছে ৩টি দরজা। সদর দরজা ও মাঝখানের গম্বুজের সামনের দিকে দু’পাশে আছে ২টি ছোট মিনার। মসজিদের ভেতরের অংশে খোদাই করা ফুল লতা পাতা ও কুরআনের আয়াত সংবলিত ক্যালিগ্রাফি। এসব খোদাই করা কারুকার্য বিভিন্ন রঙ্গে সাজানো। মসজিদের মনমুগ্ধকর দৃশ্য ইবাদতে মশগুল ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের হৃদয়ে তৃষ্ণা মেটায়। এ ধরনের কারুকার্য তি নকশা ইরানের মসজিদ ও প্রাচীন অট্রালিকায় বিদ্যমান দেখা যায়। মসজিদের সামনে আছে একটি খোলা স্থান।এর ব্যক্তি উদ্যোগেই মসজিদটি নির্মিত হয়।জানা যায় এই মালিক উদ্দিন মির্জাপুর গ্রামের প্রতিষ্ঠাতা।
তার বন্ধু মোহাম্মদ নামের এক ব্যক্তি মসজিদটির নির্মান কাজ সম্পন্ন করেন প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধারণা অনুযায়ী মুঘল শাসক শাহ সুজার শাসনামলে (১৬৫৬সাল) মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে মসজিদের নির্মাণ মধ্যবর্তী দরজার উপরে একটি ফলক আছে।ফলকের ভাষা ও লিপি অনুযায়ী ধারণা করা হচ্ছে মুঘল সম্রাট শাহ আলমের রাজত্বকালে এই নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কেউ আবার মনে করেন, মুঘল শাহজাদা আজমের সময় কালে (১৬৭৯ সালে)নির্মিত ঢাকা হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে মসকিদের সঙ্গে এই মসজিদের নির্মাণশৈলীর সাদৃশ্য আছে।
স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান, মসজিদটি নির্মাণ দীর্ঘ ৩৬৫ বছর পার হলেও কোথাও উল্লেখযোগ্য দুটি চোখে পড়েনি। এক সময় প্রবল ভূমিকম্পে মসজিদটির বেশ কিছু অংশ ভেঙ্গে যায়। তখন মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দারা মালিক উদ্দিন মসজিদটি সংস্কারের জন্য ইরান থেকে কারিগর নিয়ে আসেন।তখন থেকে আর সংস্কার কারা হয়নি।বর্তমান মসজিদটির দেয়ালে ও গম্বুজে কিছুটা ফাটল ধরেছে । এছাড়া ভিতরের বিভিন্ন জায়গায় পলেস্টার অল্প অল্প খুশি করেছে। মির্জাপুর শাহী মসজিদের নিপুন, কারুকার্য , সৌন্দর্যের ইতিহাস ও ঐতিহ্য ভ্রমণপিয়াসীদের মনে তৃষ্ণা মেটায়।
তবে ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদের তত্ত্বাবধায়নে এলাকাবাসীর পাশাপাশি সরকারের দৃষ্টিপাত জরুরি বলে মনে করেন বর্তমানের সুশীল সমাজ এর ধর্মপ্রাণ মানুষেরা কারণ এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদ পঞ্চগড় জেলার আর কোথাও চোখে পড়ে না। তাই সকলের উচিত মসজিদটি অদূর ভবিষ্যতের প্রজন্মরা যেন ভুলে না যায়।