Subscribe our Channel

চা বাগানে বদলে যাচ্ছে তেঁতুলিয়ার দৃশ্যপট

মুহম্মদ তরিকুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

 

দেশের সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের শেষ প্রান্ত হিমালয়ের পাদদেশ প্রকৃতির সবুজ সমারোহে বদলে যাচ্ছে তেঁতুলিয়ার দৃশ্যপট। বিংশ শতাব্দীর আগে অনেকেই তেঁতুলিয়ার অর্থনীতির প্রধান উৎস পাথর ও আখের জন্য বিখ্যাত বলে জানতো। কিন্তু বর্তমানে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার প্রকৃতির সম্ভারে চা-বাগানের সবুজ লীলা ভূমিতে বদলে গেছে দৃশ্যপট।

 

 

এর আগে শুধুই হিমালয় থেকে প্রবাহিত মহানন্দা নদীর প্রবল শ্রোতে  ভেলা ভাসিয়ে পাথর কোয়ারি শ্রমিকদের দল বেঁধে নুড়ি পাথর সংগ্রহ করার দৃশ্য দেখা যেত। অপরদিকে সমতল ভূমি খননপূর্বক ভজনপুর, বুড়াবুড়ি, দেবনগর, বালাবাড়ি, ডাহুক, কালীতলা, ভুতিপুকুর ও ভাঙ্গিপাড়া নামক স্থানের নুড়ি পাথর সংগ্রহের কৌশলটি আবার মহানন্দার পাথর সংগ্রহ থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত দেখা যেত। ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক মিলেই একটি দল বেধে, যারা সমতল ভূমি ১০-৫০ ফিট পর্যন্ত খনন করে নুড়ি পাথর সংগ্রহ করতো। ঐ সমস্ত এলাকার উঁচু ঢিবি দেখে অনায়াসেই মনে হয় ছোট ছোট পাহাড়ী ঢিলা ভূমি। যে কারণে তেঁতুলিয়া পাথরের জন্য খ্যাত ছিল। বর্তমানে সমতল ভূমি খনন করে পাথর সংগ্রহের কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখানকার সমতল ভূমি দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে বেশ উঁচু।

 

বেলে দো-আঁশ মাটিতে প্রচুর আখও ভালো জন্মে। তৎকালীন সময়ে আখ মাড়াই পদ্ধতি ছিল অন্য রকম। কালের আবর্তণে হারিয়ে গেছে পূর্বের সেই সব অবস্থা। তেঁতুলিয়ায় শুধু আখ ও পাথরই নয়, অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে চা, কমলা, আনারস, লিচু, আঙ্গুর ও আপেল চাষও হচ্ছে। তেঁতুলিয়া সদরের আনাচে-কানাচে ব্যাপকভাবে চা চাষে ঝুঁকেছে চাষীরা।

 

চা চাষ হচ্ছে দু’ভাবে বৃহৎ ও ক্ষুদ্রাকারে। বৃহৎভাবে কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেট, ডাহুক টি এস্টেট, আগা ইন্ডাস্ট্রিজ এন্ড কমার্স লিঃ টিটিসিএল নামের কয়েকটি কোম্পানীসহ মালিকানাভাবে ৩নং তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী আনিছুর রহমান, ৫নং বুড়াবুড়ি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা জামান রাজু, বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী ইয়াছিন আলী প্রমূখ চা বাগানে বদলে দিচ্ছে তেঁতুলিয়ার প্রকৃতি। সেই সাথে ক্ষুদ্রাকারে উৎপাদন করেছে প্রান্তিক চা চাষীরাও। ক্ষুদ্রাকারে উৎপাদিত চা বাগানও ফুটিয়ে তুলছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। চা বাগান মালিকদের বিপুল সংখ্যক অর্থের যোগান দিচ্ছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। তেঁতুলিয়ার রওশনপুর, ডাহুক, লোহাকাচি সারিয়াল জ্যোত, শালবাহান. বুড়াবুড়ি এলাকা এখন চা বাগানে পরিপূর্ণ।

 

যেদিকে চোখ যায় সেদিকে সবুজ কচি পাতায় ভরা চা বাগান অপরূপ সৌন্দর্যময় ভূমি। এখানকার উৎপাদিত চা সম্পূর্ণ আর্গানিক-যা হিমালয়, দার্জিলিং ও সিলেটের চা-এর চেয়ে উন্নত ও সুস্বাদু। তেঁতুলিয়ায় চা উৎপাদনের জন্য ইমপেরিয়াল টি ফ্যাক্টরী লিঃ, বাংলা টি ফ্যাক্টরী, ফাবিহা টি ফ্যাক্টরী চলমান রয়েছে তৈরি হচ্ছে আরও কয়েকটি। তেঁতুলিয়া সদর থেকে ৮ কি.মি দূরে পঞ্চগড়-তেঁতুলিয়া মহাসড়কের ধারেই এলজিইডি’র তত্ত্ববধান করা হয়েছে কমলা বাগান।

 

এছাড়াও ঠুনঠুনিয়া গ্রামের হোসেন আলী সাইফুল প্রযুক্তি নার্সারী করে বসতবাড়ির একখন্ড জমিতে আঙ্গুর, কমলা, আপেলসহ নানা ধরনের ফুল ও ফলের বাগান তৈরি করে প্রাকৃতির সৌন্দর্য মেলায় নিজের নাম লিখেছেন। তেঁতুলিয়ার প্রায় বাড়িতে দু’একটি ফলন্ত আঙ্গুর ও কমলা গাছ রয়েছে।

 

রওশনপুরে কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেট-এর নার্সারীতে প্রায় ২ হাজার অধিক বিভিন্ন প্রকার ফল-ফলাদি ও ওষুধি গাছের বিপুল সমারোহ রয়েছে। এদিকে সারিয়লা জ্যোত, কাজীপাড়া, দর্জিপাড়া ও কানকাটা এলাকায় দেশী আনারসের পাশাপাশি চাষীরা সিঙ্গাপুরী আনারস চাষও করছে। এছাড়াও কাজী ফার্মস গ্রুপ, অ্যাকুয়া ব্রিডার্স নামের কোম্পানি বাণিজ্যিকভাবে মুরগির ডিম ও বাচ্চা পালন করে লাভবান হচ্ছে এলাকায় বিক্রি করে।

 

এ ফার্ম গুলো স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করলে মন ও নয়ন আনন্দে ভরে উঠে। এদিকে সার্কভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে অনায়াসে ব্যবসা বাণিজ্যের সুবিধার্থে ১৯৯৭ সালের ১লা সেপ্টেম্বর বাংলাবান্ধাকে স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

 

২০১৫ সালে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ইমিগ্রেশন চালু হয়েছে। ফলে উত্তরাঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসারের পাশাপাশি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া বর্তমানে চা বাগানের সবুজের সমারোহ প্রকৃতির এক দৃশ্যপট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *