নিজস্ব প্রতিবেদক : গত বছর ১২ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়ার জন্য সাক্ষাৎকার দিতে রাজধানীর গুলশানে দেশটির দূতাবাসে পাসপোর্টসহ উপস্থিত হন ফেনীর দক্ষিণ সহদেবপুরের বাসিন্দা পলাশ চন্দ্র দাস (৩৯)। দূতাবাস কর্তৃপক্ষ পলাশের পাসপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখতে পায়— ১৩ নম্বর পৃষ্ঠায় মালদ্বীপ ভ্রমণ ও ২০ নম্বর পৃষ্ঠায় মালয়েশিয়া ভ্রমণের ভিসার জাল সিল। জাল সিল দেখে বিস্মিত হন দূতাবাস কর্মকর্তারা।একইভাবে মাদারীপুরের হাউজদী দুর্গাবদী গ্রামের বাসিন্দা মাহাবুবুর রহমান খান (৩৬) গত বছর ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়ার জন্য সাক্ষাৎকার দিতে দূতাবাসে যান। তার পাসপোর্টেও ৯ নম্বর পৃষ্ঠায় কম্বোডিয়া ও ১১ নম্বর পৃষ্ঠায় মালদ্বীপ ভ্রমণের ভিসার সিল জাল হিসেবে শনাক্ত করে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ।ভিসাপ্রত্যাশী নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার বাসিন্দা মো. মিলন (৪০) গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর পাসপোর্ট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে সাক্ষাৎকারের জন্য যান। তার পাসপোর্টের ২০ ও ২২ নম্বর পৃষ্ঠায় মালদ্বীপ ভ্রমণের জাল ভিসার সিল শনাক্ত করেন দূতাবাস কর্মকর্তারা। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসাপ্রত্যাশী আরও কয়েকজন বাংলাদেশির পাসপোর্টে বিভিন্ন দেশের ভিসার সিল জাল হিসেবে শনাক্ত করার পর পুলিশের শরণাপন্ন হয় দূতাবাস কর্তৃপক্ষ। এর পর বুধবার (১৮ জানুয়ারি) ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের সহকারী আঞ্চলিক নিরাপত্তা কর্মকর্তা মাইকেল লি বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে— পলাশ চন্দ্র দাস রাজধানীর মতিঝিলের রহমানিয়া ইন্টারন্যাশনাল কমপ্লেক্সে ট্রাভেলার্স ডায়েরি নামের একটি এজেন্সির মাধ্যমে তার ভিসা প্রসেসিং করেছেন।আর মাহাবুবুর রহমান ভিসা প্রসেসিং করেছেন হ্যাপি হলিডেইস নামের আরেকটি এজেন্সির মাধ্যমে। অন্য কোনো দেশে ভ্রমণ না করেই পাসপোর্টে সেসব দেশের ভিসার জাল সিল ব্যবহার করা ব্যক্তিদের পাসপোর্ট নম্বর উল্লেখ করে এজাহারে বলা হয়, তারা অসৎ উদ্দেশে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেতে চেয়েছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করা হলো।এ অভিযোগের পর তদন্ত শেষে পাসপোর্টে ভিসার জাল সিল ব্যবহার করা আবেদনকারী ও ভিসা প্রসেসিং এজেন্সির অভিযুক্ত ছয়জনকে বুধবার রাতে রাজধানী থেকে গ্রেফতার করে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ।গ্রেফতার হলেন- পলাশ চন্দ্র দাশ, ওয়াহিদ উদ্দিন, শফিকুল ইসলাম সুমন, মাহাবুবুর রহমান খান, আবু জাফর ও আরিফুর রহমান। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন দেশের ভিসার চারটি জাল সিল ও তিনটি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে।তদন্ত সংশ্লিষ্ট ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ যেসব দেশের ভিসা পাওয়া কঠিন সেসব দেশের ভিসা করে দেওয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কিছু ভিসা প্রসেসিং এজেন্সি। ভিসাপ্রার্থীদের সম্মতিতেই তারা প্রার্থীর পাসপোর্টের গুরুত্ব বাড়াতে বিভিন্ন দেশের জাল ভিসার সিল এবং ইমিগ্রেশনের ইন ও আউটের জাল সিল পাসপোর্টে মারে। চক্রটি গত দুই থেকে তিন বছর ধরে এ ধরনের কাজ করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।তদন্ত সংশ্লিষ্ট ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ যেসব দেশের ভিসা পাওয়া কঠিন সেসব দেশের ভিসা করে দেওয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কিছু ভিসা প্রসেসিং এজেন্সি। ভিসাপ্রার্থীদের সম্মতিতেই তারা প্রার্থীর পাসপোর্টের গুরুত্ব বাড়াতে বিভিন্ন দেশের জাল ভিসার সিল এবং ইমিগ্রেশনের ইন ও আউটের জাল সিল পাসপোর্টে মারে। চক্রটি গত দুই থেকে তিন বছর ধরে এ ধরনের কাজ করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ জাগো নিউজকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের এক কর্মকর্তা আমাদের জানান— তাদের কাছে ভিসার জন্য আবেদনকারীদের অনেক পাসপোর্টে বিভিন্ন দেশের ভিসা ও ইমিগ্রেশনের ইন ও আউটের সিল মারা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তাদের সন্দেহ হয়েছে। এরপরই আমরা তদন্তে নামি। তদন্তে দেখা গেছে এসব ভিসার সিল জাল।তিনি বলেন, পাসপোর্টের গুরুত্ব বাড়াতে কিছু এজেন্সি এসব ভিসার জাল সিল মারছে। তারা ভেবেছিল এগুলো কখনো যাচাই করা হবে না। চক্রটি মূলত যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে পাঠাতে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত চুক্তি করছে। তাদের ফাঁদে অনেকেই পা দিচ্ছেন। এসব এজেন্সিই জাল সিল লাগিয়ে ভিসা করে দিতে পারে না। জানতে চাইলে ডিএমপির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের (উত্তর) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জুনায়েদ আলম সরকার বলেন, অনেকেই ভিসা প্রসেসিংয়ের জন্য ট্রাভেলস এজেন্সি খুলে বসেছে। এদের মধ্যে কিছু অসাধু এজেন্সি ভিসাপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ভিসা সহজে পেতে পাসপোর্টের গুরুত্ব বাড়াতে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের জাল সিল মারছে পাসপোর্টে