
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : রাজধানীর মোহাম্মদপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে (বহুমুখী) ভুয়া সনদে ১৮ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে শিক্ষক শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, ২০০৪ সালে প্রথমে কম্পিউটার অপারেটরে হিসেবে তাকে নিয়োগ দেওয়া হলেও একই দিনে তাকে পদোন্নতি দিয়ে কম্পিউটার বিষয়ের সহকারী শিক্ষক করা হয়। এভাবে নিয়োগ পাওয়ার পরও তিনি অন্যান্য শিক্ষকদের ওপর ছড়ি ঘুড়িয়ে বেড়ান বলে ভুক্তভোগী শিক্ষকদের অভিযোগ।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী মোহাম্মদপুর উচ্চ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০০৪ সালের ১১ জুন ম্যানেজিং কমিটির সভায় শফিকুর রহমানকে তৎকালীন এক সংসদ সদস্যের তদবিরে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেটি রেজুলেশনে উল্লেখ করা হলেও একই সভায় তাকে কম্পিউটার বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। সেই সভার রেজুলেশনের কপি জাগো নিউজের হাতে এসেছে।রেজুলেশনে দেখা গেছে, সভায় তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সহ-সভাপতি ও নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার আহম্মেদ জামানের উপস্থিতিতে শফিকুল রহমানকে অস্থায়ীভাবে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। একই সভায় তাকে পদোন্নতি দিয়ে কম্পিউটার বিষয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এ সভায় ৯ জন সদস্যের নাম উল্লেখ থাকলেও প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির একজন সদস্যও সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন না বলে সিদ্ধান্তে তাদের স্বাক্ষর নেই।
অন্যদিকে শফিকুর রহমান রাজধানীর শ্যামলীর ন্যাশনাল ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিং একাডেমি থেকে ২০০০ সালে এক বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্সের সনদ দিয়ে কম্পিউটার শিক্ষক পদে নিয়োগ পান।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাউজ নং ৪, শ্যামলী মিরপুর রোড, ঢাকা ১২০৭- এই ঠিকানায় ন্যাশনাল ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিং একাডেমি গড়ে তোলা হলেও করোনা পরিস্থিতিতে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। তবে ওয়েবসাইটে এখানো তাদের ঠিকানা ও ম্যানেজার মিজানুর রহমানের মোবাইল নাম্বার দেওয়া রয়েছে।মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, করোনা পরিস্থিতি শুরু হলে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এটি করিগরি শিক্ষা বোর্ডের কোনো অনুমোদন ছিল না, সমাজসেবা অধিদপ্তরের অনুমোদনে চলতো।কম্পিউটার বিষয়ে কী কী কোর্স করা হতো জানতে চাইলে তিনি জানান, তারা তিন মাস ও ছয় মাসের কম্পিউটার বিষয়ে শর্ট কোর্স করানো হতো। এক বছরের কোনো কোর্স ছিল না।এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক শফিকুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, শ্যামলীর ন্যাশনাল ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিং একাডেমি থেকে আমি এক বছরের কম্পিউটার কোর্স করেছি। সেখানে এক বছরের কোনো কোর্স ছিল না- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, এক বছরের ডিপ্লোমা কোর্সে আমি সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে পাস করেছি। কেউ যদি সেটি মিথ্যা বলে আমার কিছু করার নেই।এদিকে মোহাম্মদপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, শফিকুর রহমান যোগদানের কয়েক বছর পর থেকে শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ করে আসছেন। বর্তমান প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন সরকারের ডানহাত হিসেবে কাজ করেন বলে কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পান না। প্রধান শিক্ষকের কাছে শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে বিচার দিয়েও কোনো লাভ হয় না। শিক্ষক নিয়োগ, প্রতিষ্ঠানের নানা ধরনের কেনাকাটা, পরিত্যক্ত জিনিস বিক্রিসহ বিভিন্ন বিষয় শফিকুর রহমানের সিদ্ধান্তে হয়ে থাকে বলে অভিযোগ করেন তারা।এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন সরকার জাগো নিউজকে বলেন, শফিকুল রহমানের সনদ ভুয়া কি না আমি জানি না। আমি ২০১৫ সালে এখানে যোগদান করেছি। আমার অনেক আগে তিনি যোগদান করেছেন।
বিষয়টি আমি শুনলাম, খতিয়ে দেখা হবে।তার বিরুদ্ধে শিক্ষকরা অভিযোগ দিলে আমলে নেওয়া হয়নি- এমন অভিযোগের জবাবে প্রধান শিক্ষক বলেন, এটি সত্য নয়, কেউ লিখিতভাবে শফিকুরের বিরুদ্ধে বিচার দেননি। দু/একজন মৌখিকভাবে অভিযোগ করলেও তার কোনো ভিত্তি পাওয়া যায়নি।