
আবুবক্কর সিদ্দিক :
করোনাভাইরাসের কারণে গত দুই বছর নিরানন্দে গেলেও এবার উৎসবমুখর ঈদুল ফিতর উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে মানুষ। জীবিকার তাগিদে যান্ত্রিক নগরী ঢাকায় পড়ে থাকা মানুষগুলো গ্রামের বাড়ি ছুটতে শুরু করেছেন।গতকাল বুধবার থেকেই শুরু হয়েছে এই ঈদ যাত্রা।
দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার বিকেল হতেই নাড়ির টানে ঢাকা ছাড়া নগরবাসীর জটলা বাড়তে থাকে বিভিন্ন বাস ও ট্রেন স্টেশনে। ট্রেন দেরিতে ছাড়ায় কিছুটা ভোগান্তি হলেও বেশ উচ্ছ্বাস নিয়েই প্রিয়জনের সান্নিধ্য পেতে ঢাকা ছাড়ছেন তারা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায় ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া মানুষের জটলা। পরিবার নিয়ে চট্টগ্রামে যাওয়ার জন্য কমলাপুর রেলস্টেশনে এসেছেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম।তিনি বলেন, অনেক কষ্ট করে ট্রেনের চারটি টিকিটের ব্যবস্থা করেছি। গত দুই বছর ঢাকায় বন্দি হয়ে ঈদের সময় কাটিয়েছি।
দুই বছর পর ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছি। ভাবতেই খুব ভালো লাগছে।তিনি বলেন, আমাদের ট্রেন সাড়ে ৪টায় ছাড়ার কথা। অফিস শেষ করে ৪টার আগেই স্টেশনে চলে আসছি। গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাচ্ছি অন্যরকম অনুভূতি। তবে প্রচণ্ড গরমে স্টেশনে বসে থাকতে বিরক্তি লাগছে।
যত কষ্টই হোক বাড়িতে গিয়ে বাবা-মায়ের মুখ দেখলে সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে।সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিট ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে এসার সিন্দুরগোধূলী ট্রেন। এই ট্রেনে পরিবারসহ কিশোরগঞ্জ যাওয়ার জন্য ৬টার আগেই স্টেশনে এসেছেন হাবিবুর রহমান।তিনি বলেন, বাসা থেকে ইফতারি করে আসতে গেলে ট্রেন মিস হয়ে যেতে পারে। তাই ইফতারি নিয়ে আগে ভাগেই স্টেশনে চলে এসেছি।
স্টেশনে ইফতারি করবো। ট্রেন সঠিক সময় ছাড়বে কি না বলতে পারছি না। সকালে বিভিন্ন ট্রেন দেরিতে ছেড়েছে বলে খবর পেয়েছি।তিনি আরও বলেন, স্টেশনে প্রচণ্ড গরম। এতে বেশ কষ্ট হচ্ছে।
ট্রেন সঠিক সময়ে না থাকলে কষ্ট আরও বেড়ে যাবে। তবে যত কষ্টই হোক এবার বাড়িতে গিয়ে ঈদ করবো। ঢাকায় ঈদের কোনো আনন্দ নেই। গত দুই বছরের ঈদে ঢাকায় থেকেছি।কোনো রকম মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েছি। এরপর বাসায় এসে বন্দি সময় পার করেছি। দুই বছর পর গ্রামের বাড়ি ঈদ করতে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছি এজন্য মহান আল্লাহতালার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।পরিবার নিয়ে কমলাপুর স্টেশনে আসা আলী হোসেন নামের একজন বলেন, জীবিকার তাগিদে যান্ত্রিক নগরী ঢাকায় পড়ে থাকি। কিন্তু মন পড়ে থাকে গ্রামের বাড়িতে।
গ্রামের বাড়ি ঈদ করে যে আনন্দ পাই ঢাকায় তার কিছুই পাওয়া যায় না।তাই যত কষ্টই হোক সব সময় গ্রামের বাড়ি ঈদ করার চেষ্টা করি। গত বছর করোনার কারণে ঈদে গ্রামের বাড়ি যেতে পারিনি।
এবার বাড়িতে যাচ্ছি ঈদের ছুটির সঙ্গে বাড়তি চারদিন ছুটি নিয়েছি। অনেকদিন গ্রামের বাড়িতে থাকব সবার সঙ্গে আনন্দ উৎসব করবো।বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা মো. হাসান সোহেল বলেন, ঢাকায় চাকরি করি।
এখানে একাই থাকি। বাবা-মা, ভাই-বোন সবাই কিশোরগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে। বাবা-মা, ভাই-বোনের সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি।ট্রেনের টিকিট কাটতে অনেক কষ্ট হয়েছে।
স্টেশনে এসে গরমে কষ্ট পাচ্ছি। তবে গ্রামের বাড়িতে পা পড়তেই সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে। গ্রামের বাড়ির কথা মনে মনে ভাবছি আর অন্যরকম রোমাঞ্চিত হচ্ছে। মনের ভেতর কি যে অনুভূতি হচ্ছে বলে বোঝাতে পারবো না।