Subscribe our Channel

চট্টগ্রামের সংরক্ষিত মহিলা এমপির চুড়ান্ত আলোচনায় রয়েছে জিনাত সোহানা

মারুফ সরকার, স্টাফ রিপোর্টার : জঙ্গিবাদমুক্ত আধুনিক, স্মার্ট ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ার অভিপ্রায়ে চট্টগ্রামে অনন্য নজির গড়ে তুলেছেন সংগঠক জিনাত সোহানা চৌধুরী। সুচিন্তা বাংলাদেশ চট্টগ্রাম বিভাগের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট জিনাত সোহানা চৌধুরীর উদ্যোগে চট্টগ্রামে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলছে সমাজকে বদলে দেয়ার অভিনব প্রচেষ্টা। চট্টগ্রামে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের বিপথগামিতা থেকে রক্ষা এবং তাদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত করতে কাজ করছেন তিনি। দীর্ঘদিরন ধরে চট্টগ্রাম শহর এবং বিভিন্ন উপজেলার কওমি ও অন্যান্য মাদ্রাসায় আয়োজন করছেন ‘জঙ্গিবাদ বিরোধী আলেম ওলামা শিক্ষার্থী সমাবেশ’। মুক্তিযুদ্ধের গল্প এবং জয় বাংলা সেøাগানসহ সমবেত জাতীয় সংগীত পরিবেশনায় অংশ নেন মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা। মুষ্ঠিবদ্ধ হাতে নেওয়া হয় দেশবিরোধী সহিংসতা কিংবা উগ্রবাদে না জড়ানোর শপথ। চট্টগ্রামের সংগঠক জিনাত সোহানা চৌধুরী এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। মোবাইলে, সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে হরদম হুমকির মুখোমুখি হতে হয়েছে। তারপরও দমে যাননি তিনি। অদম্য সাহস আর কিছু সৃষ্টিশীল মানুষদের সহযোগিতায় এই কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে চলেছেন জিনাত সোহানা। জিনাত সোহানার মানবিক কর্মযজ্ঞ বিস্তৃত হয়েছে করোনাকালের কঠিন সময়েও। চট্টগ্রামে কিছু স্বপ্নবাজ তরুণদের সঙ্গে নিয়ে ১০ দিনের মাথায় গড়ে তোলেন ১০০ শয্যার করোনা আইসোলেশন সেন্টার। করোনার কঠিন দুঃসময়ে ৮০০ করোনা আক্রান্ত রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়েছে এই সেন্টার। জিনাত সোহানা জানান, চট্টগ্রাম নগর এবং উপজেলায় শতাধিক কওমি ও অন্যান্য মাদ্রসার প্রায় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী শুনেছেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। যেখানে জাতীয় সংগীত পরিবেশনে ছিল অলিখিত নিষেধাজ্ঞা, সেখানে শিক্ষার্থীদের সমবেত কণ্ঠে উচ্চারিত হয় জাতীয় সংগীত, জয় বাংলা স্লোগান ।

এতে অংশ নেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ, প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, দেশের প্রখ্যাত আলেম ওলামা এবং জঙ্গিবাদ নির্মূলে কাজ করা সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তিনি বলেন, ‘মাদ্রাসার বৃহৎসংখ্যক শিক্ষার্থী এই দেশেরই উন্নয়ন অগ্রগতির অংশীদার। তারা যদি মূলধারায় যুক্ত হন, বাংলাদেশ অনেকখানি এগিয়ে যাবে। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ধর্মীয়, নৈতিক শিক্ষার পাশাপাশি তথ্য প্রযুক্তির শিক্ষায় শিক্ষিত হলে দেশের উন্নয়নে অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সমান্তরালে নিজেদের অবস্থান গড়ে নিতে পারবেন। পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা- যারা অজ্ঞতা, কুসংস্কারবোধ ধর্মীয় গোঁড়ামির জালে আবদ্ধ আমরা তাদের আলোর পথ দেখাতে চাই।’ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী বলেন, ‘দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির চর্চা হয়। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মগজধোলাই করে উগ্রবাদের দিকে ধাবিত করে একটি গোষ্ঠী। পবিত্র ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করার অপচেষ্টা রুখে দেওয়া এই কর্মসূচীর প্রধান লক্ষ। চট্টগ্রাম বিভাগে শুধুমাত্র মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে এই কর্মসূচী পালন করা হলেও পরবর্তীকালে স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়েও চালু করা হবে।’ কেন নিজেকে এই কর্মসূচীতে যুক্ত হলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে জিনাত সোহানা বলেন, “দেশের প্রধামন্ত্রী ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে ঘোষণা দেন দেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূল করার। একজন নারী হিসেবে দেশকে জঙ্গিবাদমুক্ত করার ঘোষণা আমাকে ভীষণ অনুপ্রাণিত করেছে। প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগের সারথী হতে ‘সুচিন্ত বাংলাদেশ’-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ আরাফাতের নির্দেশনায় নিরন্তর কাজ করে চলেছি।” একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নৌকার পক্ষে ছিলো তার নানা রকম উদ্যোগ। চট্টগ্রাম বিভাগজুড়ে নৌকার প্রার্থীদের সমর্থনে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভিজুয়্যালি বিএনপি-জামায়াতের ১০০ দিনের হরতালের বর্বরতার চিত্র এবং বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘু নির্যাতনের চিত্র এবং দিন বদলের উন্নয়নের চিত্র, প্রতিটি মানুষের কাছে তুলে ধরেন। নৌকার পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে ব্যাপক ভ‚মিকা রাখে তার এসব উদ্যোগ। ফলে আওয়ামী লীগের গ্রামগঞ্জ, শহর ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় মুখ হয়ে ওঠেন অ্যাডভোকেট জিনাত সোহানা চৌধুরী। এবার একাদশ সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে সোহানাকে দেখতে চাইছেন এলাকার মানুষ। যদিও আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব সিদ্ধান্তে মনোনয়ন দেবেন। চ‚ড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী জিনাত সোহানা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে নগরজুড়ে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে সবার দৃষ্টি কাড়েন। চট্টগ্রামের রাউজানে জন্ম নেওয়া জিনাত সোহানা বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রামে। তার বড় বোন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী। সোহানা বলেন, ‘সবাই যার যার অবস্থান থেকে দেশের উন্নয়নে কাজ করবে। নারীদের কাজ করার কর্মপরিবেশ তৈরি হয়েছে। নারীকে নারী হিসেবে না দেখে তাদের যদি মানুষ হিসেবে দেখে, তাহলে কাজ করা সহজ হবে।’ সোহানা চট্টগ্রাম আদালতে অতিরিক্তি পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে কাজ করছেন। ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সেক্সুয়াল হেরেসমেন্ট কমিটির একজন সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। টানা তৃতীয়বারের মতো যুক্ত আছেন বেসরকারি কারা পরিদর্শক হিসেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *