জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : আদানি গ্রুপসহ ভারত থেকে আনা ২ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুতের স্বচ্ছতা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তিতে শুল্ক ও কর সংক্রান্ত বিষয়গুলো কীভাবে সম্পাদন করা হয়েছে, তাতে কোনো ত্রুটি ছিল কি না, শুল্ক পরিহার বা প্রত্যাহারের বিষয়ে নিয়ম মানা হয়েছে কি না; এসব বিষয় জানতে তদন্ত শুরু করেছে এনবিআরের কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বিদ্যুৎ আমদানি হলেও এ ক্ষেত্রে ভারত শুল্ক আইন মানেনি। এযাবৎকালে কখনো বিল অব এন্ট্রিও জমা দেওয়া হয়নি। গৌতম আদানির মালিনাধীন বহুজাতিক কোম্পানি আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বাজার দরের চেয়ে বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনার অভিযোগ রয়েছে।এসব বিষয় জানতে বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) আট কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের আদেশ জারি হয়েছে। এ বিষয়ে এনবিআরের কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুনমুন আকতার দিনার সই করা আদেশটি পাওয়া গেছে ।কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ফখরুল আলম এই কমিটি অনুমোদন করেছেন। রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) থেকে শুরু হচ্ছে কমিটির তদন্তকাজ। এই কমিটি আগামী ১ মাসের মধ্যে ভারত থেকে আনা বিদ্যুতের দায় শোধ, প্রতি ইউনিটের দাম, প্রযোজ্য শুল্ক-কর ও শুল্ক আইন মেনে আমদানি করার সব তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন দেবে।২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর বিদ্যুৎ বিভাগ ও ‘আদানি পাওয়ার’এর মধ্যে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি হয়। চুক্তির আওতায় বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিতে ভারতের ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে আদানি পাওয়ার। গত বছরের ৯ মার্চ সন্ধ্যা ৭টা ৩৮ মিনিটে ঝাড়খণ্ডের গড্ডা থেকে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালন শুরু হয়। আদানির বিদ্যুৎ দেশে এনে জাতীয় গ্রিডে যোগ করতে বিশেষ সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ অংশে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও বগুড়ায় দুটি সাবস্টেশন ও অন্যান্য সঞ্চালন স্থাপনা নির্মাণ করেছে বিদ্যুৎ সঞ্চাল ন কোম্পানি পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ-পিজিসিবি।জানা গেছে, বিদ্যুৎ আনতে ভারতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে বিগত আওয়ামী সরকার। চুক্তির আওতায় তিনটি পথে প্রায় ২ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করে বাংলাদেশ।
এর মধ্যে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা, কুমিল্লা আর চাঁপাইনবাবগঞ্জ দিয়ে আসছে এসব বিদ্যুৎ। তবে মাত্র ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির জন্য শুল্ক-কর সংক্রান্ত ছাড়পত্র জারি হয়েছে।বাকি বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক-কর ছাড়ের কোনো তথ্য-প্রমাণ পায়নি এনবিআর। যে বিদ্যুৎ আসছে, এর জন্য শুল্ক আইন মেনে বিভিন্ন শুল্ক স্টেশনে বিল অব এন্ট্রি জমা দেওয়ার কথা। কিন্তু কখনো বিল অব এন্ট্রি জমার তথ্য নেই কাস্টমসের কাছে। শুল্ক কর ফাঁকি ধরতে ওই কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে কাস্টমস গোয়েন্দো অধিদপ্তরের যুগ্ম পরিচালক এদিপ বিল্লাহকে। সদস্যসচিব করা হয়েছে উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমানকে । সংস্থার উপ-পরিচালক সহ ছয়জনকে রাখা হয়েছে কমিটির সদস্য হিসেবে।