মো. তোফাজ্জল হোসেন, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের বীরগঞ্জে প্রতারক স্বামীর শত অন্যায় মেনে নিলেও রফিকা এখনোও ফিরে পায়নি স্ত্রীর মর্যাদা, উল্টো নিজনামে ক্রয়কৃত জমি অবৈধভাবে সন্ত্রাসী কায়দায় দখলের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে স্বামী ও শশুর পরিবারের সদস্যরা।উপজেলার সুজালপুর ইউনিয়নের বড় শীতলাই গ্রামের হতদরিদ্র আব্দুর রউফ-মঞ্জুয়ারা বেগম দম্পতির কন্যা রফিকা খাতুন (২০) জানায়, অসচ্ছল পারিবারে জন্ম নেয়ায় গত প্রায় তিন বছর পূর্বে তার পিতা-মাতা তাকে দেখাশোনা ও ভরনপোষণের জন্য পালিত মাতা শারমিন মাহাবুবের নিকট রাখে। বিবাহের উপযুক্ত হওয়ায় পালিত মাতার কাছে লালন-পালনের সুবাদে ইসলামী শরিয়া মোতাবেক গত ১৮ই এপ্রিল ২০২৪ ইং একই গ্রামের মরহুম আবুল হোসেন আলীর ছেলে আল আমিন (২৮) এর সাথে আনুষ্ঠানিক বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিবাহের উপঢৌকন সরূপ পালিত মায়ের কাছ থেকে সুকৌশলে ও প্রতারনা পূর্বক জমি, মোটরসাইকেল ক্রয় বাবদে সর্বমোট প্রায় ২৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় আল-আমিন। বিবাহের পর পরেই শশুর বাড়িতে নিতে অক্ষমতা প্রকাশ করলে আজীবন দেখভাল করার আশ্বাসে পালিত মাতার বাসাতেই ঘর-সংসার করাকালীন শশুর পরিবারের সদস্যদের কুপরামর্শে পুনরায় যৌতুক বাবদ ৩ বিঘা আবাদি জমিসহ পাকা বাড়ি নির্মাণের অনৈতিক দাবী জানায় আল-আমিন। প্রস্তাবে রাজি না হলে স্বামীর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার আর অমানবিক নির্যাতন সহ্য করলেও সে একের পর এক অস্বাভাবিক আচরণ করতেই থাকে।
এরই ধারাবাহিকতায় ১ লা জুলাই ২৪ ইং সকাল আনুমানিক ৭ ঘটিকায় বড় শীতলাই গ্রামেই পালিত মাতার মালিকানাধীন অপর একটি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে শয়নঘরে শ্বাসরোধ করে রফিকার যৌনাঙ্গ বাদে প্রশ্চাৎ ভাগ ব্যবহার করে গুরুতর রক্তান্ত ও এলোপাতাড়ি মারপিটে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে। একপর্যায়ে ধারালো চাকু দিয়ে পশ্চাৎ ভাগ কাটা রক্তাক্ত অবস্থায় রেখে পালিয়ে যায়। আহতের আত্ম চিৎকারে ঘটনা জানতে পেরে মিথিলা বেগম, রশিদুল ইসলাম সহ স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে। চিকিৎসা শেষে এ বিষয়ে রফিকার লিখিত এজাহারে স্বামী আল- আমিন, শাশুরী মফিজা(৫০), ভাসুর হোসেন আলী(৩৩), বেলাল হোসেন(৩৫) ও ননদ মরিয়ম সহ ৫ জনকে আসামী করে বীরগঞ্জ থানার মামলা নং-০৫, তারিখ ০৪/০৭/২০২৪ইং, জি,আর ১৫১/২৪ (বীরগঞ্জ), ধারা ২০০০সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধিত/২০)এর১১(খ)/৩০। তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা এজাহার নামীয় আল-আমিন কে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করলে ও মামলা চলমান থাকলেও হাজতি আসামী কোনো রকমের নির্যাতন ও যৌতুকের দাবী না করা সহ স্ত্রী হিসেবে রফিকাকে পূর্ন মর্যাদা দিয়ে সংসার করবে মর্মে অঙ্গিকার নামা করে আদালত হতে জামিনে মুক্তি পায়। জামিনে মুক্তি পেয়ে বাড়িতে ফিরে আল-আমিন আদালতে দেয়া অঙ্গিকার নামা না মেনে সংসার করবেনা মর্মে তার বাড়িতে প্রবেশ করতে না দিয়ে ২৯/০৯/২৪ ইং সকালে রফিকার নিজনামীয় ক্রয়কৃত শীতলাই মৌজার এসএ খতিয়ান নং-১৯৭, খারিজ খতিয়ান নং-৮৮৫, এসএ দাগ নং-১৭২৫, আরএস দাগ নং-২৯২৪, রকম- ডোবা, ৯ শতক জমি জোরপূর্বক জবর দখলের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়ে লোকবল নিয়ে উল্লেখিত জায়গায় বাশের বেড়াখুটি দেয়। এসময় বাধা প্রদান করলে আল-আমিন গং প্রকাশ্যে রফিকাকে ধর্ষণ সহ মেরে ফেলার বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদশর্ন করে। একই দিনে রফিকা খাতুন বীরগঞ্জ থানায় হাজির হয়ে সাধারণ ডায়েরির আবেদন করেন, যার জিডি নং-২০৮৪। এ ব্যপারে পালিত মাতা শারমিন মাহাবুব জানান, প্রতারনাপূর্বক নগদ অর্থ সহ জালিয়াতির মাধ্যমে ভুমিদস্যু আল আমিন তার ৫০ শতাংশ জমি অবৈধভাবে জবর দখল করার পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে এবং বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেই চলেছে। তিনি বিষয়টি নিয়ে পুলিশ প্রশাসন সহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শীতলাই ও চাকাই গ্রাম এলাকার সাধারণ মানুষের মাধ্যমে আরোও জানা যায়, সম্প্রতি অন্তবর্তী সরকার আমলে হওয়া দিনাজপুরে হত্যা চেষ্ঠা মামলার এজাহার ভুক্ত আসামী শীতলাই গ্রামের প্রভাবশালী এক আওয়ামী নেতার ছত্রছায়ায় আল আমিন এলাকায় দানবীয় তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আল আমিনের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার ফোন করেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। বীরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মজিবুর রহমান এর কাছে জানতে চাইলে, তিনি উল্লেখিত বিষয়ে থানায় মামলা ও সাধারণ ডায়েরির বিষয়ে সত্যতা যাচাই পূর্বক আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান।