Subscribe our Channel

তেঁতুলিয়ায় কম্পিউটার শিক্ষক এখন ব্যবসায় শিক্ষার সহকারী শিক্ষক

মুহম্মদ তরিকুল ইসলাম, নিজস্ব (পঞ্চগড়) প্রতিনিধিঃ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে  গিয়াস উদ্দিন নামে এক সহকারী কম্পিউটার শিক্ষক তার পদ পরিবর্তন করে অবৈধ ভাবে ব্যবসায় শিক্ষায় শিক্ষক পদে নিয়োগ ও বেতনভাতা উত্তোলন করার অভিযোগ উঠেছে। তবে ওই শিক্ষকের এমন কর্মকান্ডের বিভিন্ন ভাবে অভিযোগ উঠলেও নীরব ভূমিকায় বিদ্যলায় কর্তৃপক্ষ, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসসহ স্থানীয় প্রশাসন। অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে ওই শিক্ষক বেতন- ভাতা উত্তোলন করেছেন। জানা গেছে, গিয়াস উদ্দিন ওই বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক পদে দীর্ঘ দিন ধরে চাকরি করে আসছেন। তবে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের পর ২০১৮ সালের নীতিমালা অনুযায়ী কম্পিউটার বা আইসিটি শিক্ষক পদে যোগ্যতা ৩ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার কোর্সের কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে ওই শিক্ষকের সেই যোগ্যতা না থাকায় তিনি তদবির করে ব্যবসায় শিক্ষায় সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেছেন বলে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। ওই বিদ্যালয়ে সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, গিয়াস উদ্দিন নামে ওই শিক্ষক ২০০৫ সালের পহেলা মার্চ তেঁতুলিয়া পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার শিক্ষক) পদে যোগদান করেন। যোগদানের প্রায় দেড় বছর পর ২০০৬ সালের জুলাই মাস থেকে তিনি নিয়মিত বেতন ভাতা পেতে শুরু করেন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হলে সেই পদেই তিনি ২০২৩ সালের ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত নিয়মিত বেতন- ভাতাসহ যাবতীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করেন।

এমপিও ভুক্তি থেকে জাতীয়করণের পর বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের স্ব-স্ব পদে যোগদান করলেও গিয়াস উদ্দিন নামে ওই সহকারী শিক্ষক গত ২০২৩ সালের ২০ নভেম্বর কম্পিউটার শিক্ষক পদের পরিবর্তে ব্যবসায় শিক্ষায় সহকারী শিক্ষক পদে নতুন করে তিনি যোগাদান করেন। ২০২৩ সালে যোগদান করে ২০২৪ সালের প্রকাশিত গেজেটের অজুহাতে বর্তমানে তিনি ব্যবসায় শিক্ষায় শিক্ষক পদে বেতন ভাতা উত্তোলনের করছেন। অথচ সেই বিদ্যালয় ব্যবসা শাখা চালুই নেই। এদিকে বিদ্যালয়ে কম্পিউটার পদে যোগদান করে দীর্ঘ দিন চাকরি করার পর হঠাৎ করে ব্যবসায় শিক্ষায় শিক্ষক বনে যাওয়ায় এলাকায় রীতিমতো চাঞ্চল্যতা সৃষ্টি হয়েছে। সেই বিদ্যালয়ে তিনি ব্যবসায় শিক্ষায় শিক্ষক পদে যোগদান বা নিয়োগ পেলেও সেই বিদ্যালয়ে নেই ব্যবসা শাখা বা বিভাগ। বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ওই বিদ্যালয়ের মানবিক ও বিজ্ঞান শাখায় বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক সংকট রয়েছে। যার কারণে শিক্ষার্থীদের ফলফলও সন্তোজনক নয়। এছাড়াও বিদ্যালয়ে শতাধিক কম্পিউটার ও ল্যাপটপসহ একটি আইসিটি ল্যাব রয়েছে। ফলে শিক্ষক সংকটের ফলে সেটিও ব্যবগত হচ্ছে। শিক্ষক সংকটের বিপরীতে ব্যবসায় শিক্ষায় শিক্ষক নিয়োগ দেয়ায় বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা দেখা দিচ্ছে। এদিকে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ওই বিদ্যালায়ের শিক্ষক ও স্থানীয়রা জানান, গিয়াস উদ্দিন নামে ওই শিক্ষক কম্পিউটার শিক্ষক পদে যোগদান করে দীর্ঘ দিন ধরে চাকরি করলেও বিদ্যালয়টি বর্তমানে জাতীয়করণ হওয়ায় সেই পদে নিয়োগ পেতে হলে ৩ বছরের ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার কোর্স ও কম পক্ষে দ্বিতীয় বিভাগ উত্তীর্ণ যোগ্যতা উল্লেখ্য থাকায় সেই শিক্ষকের সেই যোগ্যতা নেই। ফলে তিনি তার যোগদান করার স্ব-পদের পরিবর্তে তদবির করে ব্যবসায় শিক্ষায় সহকারী শিক্ষক পদে আবেদন করেছেন। তার নেই শিক্ষক নিবন্ধন তাই বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ব্যবসা শাখা না থাকা সত্বেও বর্তমানে তিনি ব্যবসায় শাখায় শিক্ষক পদে যোগদান করে বেতন বিল উত্তোলন করছে। এ বিষয়ে কথা হয় অভিযুক্ত শিক্ষক গিয়াস উদ্দিনের সাথে তিনি বলেন, আমি দীর্ঘ দিন ধরে কম্পিউটার শিক্ষক পদে চাকুরী করে আসছি। পরে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হওয়ায় আমার ব্যবসায় শিক্ষায় যোগ্যতা ও বি কম পাশের সনদ থাকায় আমাকে ব্যবসায় শিক্ষায় সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দিয়েছেন, তাই আমি এখন বেতন বিল উত্তোলনের জন্য আমার কাগজপত্র সাবমিট করেছি। তবে ওই শিক্ষক বলেন, ২০২৪ সালে প্রকাশ হওয়া গেজেটের নির্দেশ অনুযায়ী আমি যোগদান করেছি। তবে তিনি ২০২৪ সালের গেজেট দেখিয়ে বেতন উত্তোলন করলেও তিনি যোগদান করেন ২০২৩ সালে। এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) রফিকুল ইসলাম জানান, গিয়াস উদ্দিন কম্পিউটার শিক্ষক। বিদ্যালয থেকে শিক্ষকের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সময় তার কম্পিউটার শিক্ষক পদে তালিকা পাঠানো হলেও তিনি কিভাবে ব্যবসায় শিক্ষায় শিক্ষক পদে নিয়োগ পান। কম্পিউটার শিক্ষক হয়েও কিভাবে ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষক পদে বেতনভাতা উত্তোলনের বেতনসিটে স্বাক্ষর করেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় যেহেতু তাকে ব্যবসায় শিক্ষায় নিয়োগ চূড়ান্ত করছে তাই তিনি স্বাক্ষর করে বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও তেঁতুলিয়া সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ফজলে রাব্বি জানান, গিয়াস উদ্দিন নামে ওই শিক্ষকের বিষয়ে অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্ত করার জন্য বলা হয়েছে। তবে ইউএনওর নির্দেশে বিষয়টির তথ্য জানতে ওই প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার শিক্ষক গিয়াস উদ্দিনের কাছে প্রায় ঘন্টা খানিক বসা হলে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও গণমাধ্যমকে কোন সুষ্ঠু জবাব দিতে পারেননি। এদিকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শওকত আলী বলেন, আমি বিষয়টি প্রথমে জানতাম না। পরে বিষয়টি জানার পরে ওই শিক্ষকের কাগজপত্র দেখি। যেহেতু মন্ত্রণালয় তাকে ব্যবসায় শিক্ষক পদে নিয়োগ দিয়েছে সেক্ষেত্রে আমাদের করণীয় আর কিছুই করার নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *