কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা ফাহিমা আক্তার ফাহিম। যোগদানের পর থেকে অভিযোগ ছিল বিভিন্ন প্রকল্পে প্রদর্শনীর টাকা আত্মসাতের। এসব অভিযোগ থাকার পরও মুখ খুলতে ভয় পেতেন কৃষকরা। তবে এখন বেরিয়ে আসছে ফাহিমা আক্তার ফাহিমের অনিয়মের চিত্র। তবে এসব অভিযোগ মানতে নারাজ ওই কৃষি কর্মকর্তা।জানা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় ভাসমান সবজি চাষে ফ্লাড রিকনস্ট্রাকশন ইমারজেন্সি এসিসটেন্স প্রজেক্ট (ফ্রিপ) প্রকল্পের আওতায় এডিবির অর্থায়নে ২০টি প্রদর্শনী দেওয়া হয়। যেগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় ৭ লাখ টাকা। প্রতিটি প্রদর্শনীর ব্যয় ধরা হয় ৩৫ হাজার টাকা। কিন্তু ৩৫ হাজার টাকার বরাদ্দে কৃষকদের দেওয়া হয়েছে মাত্র ৪ হাজার টাকা। সে হিসাবে ২০টি প্রদর্শনীতে কৃষকরা পেয়েছেন মাত্র ৮০ হাজার টাকা। বাকি টাকা চলে গেছে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পকেটে।এখানেই শেষ নয়। তথ্য বলছে, অন্য একটি প্রকল্প ভাসমান বেডে সবজি ও মসলাচাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ প্রকল্প, দ্বিতীয় সংশোধিত (ডিএই অংগ) বাস্তবায়নে ৫০টি প্রদর্শনি দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ভাসমান বেডে মসলা প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে ১০টি, ভাসমান বেডে লতাজাতীয় সবজি প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে ১৫টি, ভাসমান বেডে লতাবিহীন সবজি চাষে প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে ২৫টি। তার মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে ১২টি। বাকি ৩৮টি প্রদর্শনীর কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। আর ১২টি প্রদর্শনীতে কৃষকরা পেয়েছেন মাত্র ৫৪ হাজার টাকা। যেখানে কৃষকরা ১২টি প্রদর্শনীতে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়ার কথা।অর্থাৎ প্রকল্পের প্রদর্শনীতে সরকারের বরাদ্দ যতই থাকুক কৃষকদের ভাগ্য ৪ হাজার টাকায় বাধা রয়েছে । এরইমধ্যে ৬ মাস মেয়াদী প্রদর্শনীগুলোর ৩ মাস অতিবাহিত হয়েছে।তিনটি প্রকল্পে ৭৪টি প্রদর্শনীর মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে ৩৫টি । তার মধ্যে ময়মনসিংহ প্রকল্প ৪টির মধ্যে ৩টি, ফ্রিপ প্রকল্পে ২০টি, ভাসমান প্রকল্পে ১২টি । বাকি প্রদর্শনী বাস্তবায়ন না করে পুরো টাকা তুলে নিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা।প্রকল্পের প্রদর্শনী চাষি ফয়জ উদ্দিন বলেন, আমি ১২ বছর যাবত ভাসমান বেডে সবজি, মসলা চাষ করে আসছি। এডিবির অর্থায়নে এ বছর ৬টি প্রদর্শনী করেছি। চারটি বেডে একটি প্রদর্শনী। প্রতিটি প্রদর্শনী বাবদ আমাকে খরচ দেওয়া হয়েছে চার হাজার টাকা। এই টাকায় আমাদের প্রদর্শনী করতে অনেক কষ্ট হয়। চার হাজার টাকার বাইরে প্রদর্শনীতে আমাদের কোনো সহায়তা করা হয় না।চাষি নুরুল ইসলাম বলেন, এ বছর আমি এডিবির অর্থায়নে ৫টি আর ময়মনসিংহ প্রকল্পের অর্থায়নে ১টি প্রদর্শনী করেছি। প্রতিটি প্রদর্শনী বাবদ আমাকে ৪ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। অফিস থেকে বীজ আর কিছু ওষুধ দেওয়া হয়েছে। প্রদর্শনীতে সব ধরনের সহায়তা করার কথা থাকলেও আমরা সব সহায়তা পাইনি। ব্যবহার করার জন্য বাঁশ, নেট সব আমাদের নিজেদের টাকায় কিনতে হয়েছে। ছয়মাসের প্রদর্শনীর মধ্যে এরইমধ্যে তিনমাস চলে গেছে।কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফাহিমা আক্তার ফাহিম বলেন, প্রকল্পের যতগুলো প্রদর্শনী আমরা পেয়েছি সবগুলো বাস্তবায়ন করেছি। কিছু প্রদর্শনী রবি মৌসুমে করতে হয় সেগুলো বাস্তবায়নে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
কৃষকদের লেবার খরচ বাবদ নগদ একটা খরচ দেওয়া হয়। তাছাড়া বীজ, ওষুধ, নেট, সাইনবোর্ড, মাঁচা তৈরি করা বাবদ যে বাঁশ কেনা হয় তার খরচসহ সবকিছু কৃষি অফিস দিচ্ছে। কৃষকদের ন্যায্য অধিকার খর্ব করার কোনো অধিকার আমাদের নেই।কিশোরগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, কৃষকদের অর্থ ও উপকরণ কম দেওয়ার অভিযোগ পুরোপুরি সত্য নয়। কৃষকরা তাদের সকল সহায়তা পাবে। তাদের উপকরণ তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে। যদি কৃষকদের পাওনা দেওয়ার ক্ষেত্রে গড়মিল পাওয়া যায় তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।