Subscribe our Channel

 ভূমি সংযোজন: জাতিসংঘে রাশিয়ার নিন্দা প্রস্তাবে ভোট দেয়নি চীন-ভারত

ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউক্রেনের চার অঞ্চলে গণভোটের আয়োজন এবং সেগুলোকে রুশ ফেডারেশনে সংযোজনের নিন্দায় জাতিসংঘের একটি প্রস্তাবে ভোট দেয়নি চীন, ভারতসহ চারটি দেশ। পরিবর্তে, দুই পক্ষকেই তাৎক্ষণিক অস্ত্রবিরতি দিয়ে আলোচনার টেবিলে ফেরার আহ্বান জানিয়েছে নয়াদিল্লি। খবর পিটিআই’র।শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ‘ইউক্রেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানার মধ্যে থাকা অঞ্চলে অবৈধভাবে তথাকথিত গণভোটের আয়োজন’ করায় রাশিয়ার নিন্দা জানিয়ে একটি খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্র ও আলবেনিয়া।এতে বলা হয়, রাশিয়ার অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণে থাকা ইউক্রেনের অঞ্চল লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়ায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত তথাকথিত গণভোট বেআইনি পদক্ষেপ হতে পারে। এর কোনো বৈধতা নেই এবং ইউক্রেনের এই অঞ্চলগুলোর অবস্থার পরিবর্তনের জন্য কোনো ভিত্তি তৈরি করতে পারে না।তবে রাশিয়া ভেটো দেওয়ায় প্রস্তাবটি গৃহীত হয়নি। আর নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল চীন, ভারত, ব্রাজিল ও গ্যাবন। বাকি ১০ সদস্য নিন্দা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে।ভোটদানে বিরত থাকার ব্যাখ্যায় জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি রুচিরা কাম্বোজ বলেছেন, ইউক্রেনের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর কারণে ভারত গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। নয়াদিল্লি সবসময় মনে করে, মানুষের জীবনের বিনিময়ে কোনো সমাধান আসতে পারে না।

তিনি বলেন, আমরা অনুরোধ করছি, সহিংসতা ও শত্রুতা অবিলম্বে বন্ধ করুন। সংলাপই মতপার্থক্য ও বিরোধ নিষ্পত্তির একমাত্র উপায়, যদিও এই মুহুর্তে তা ভয়ংকর হতে পারে।এর আগে, শুক্রবার ইউক্রেনের অধিকৃত চার অঞ্চলকে রাশিয়ায় অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মস্কো থেকে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, ওই চার অঞ্চলের জনগণ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। ফলাফল সবারই খুব ভালোভাবে জানা।এসময় ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলোকে হুমকি দিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ডনবাস অঞ্চল (লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক নিয়ে গঠিত) চিরকালের জন্য রাশিয়ার হবে। আর রাশিয়া তার ভূখণ্ডকে যেকোনো মূল্যে রক্ষা করবে।ইউক্রেনের লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসনকে রুশ ফেডারেশনে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার প্রশ্নে গণভোট শুরু হয়েছিল গত শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর)। পাঁচদিন ধরে চলে এই ভোট।

এতে ব্যালটবক্স নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যান রাশিয়ার নিয়োগ দেওয়া নির্বাচনী কর্মকর্তারা। গণভোটে ৯৬ শতাংশ মানুষ রাশিয়ায় যোগদানের পক্ষে মত দিয়েছে বলে দাবি করেছে মস্কো।তবে এই ভোট এবং এর ফলাফল অস্বীকার করেছে ইউক্রেন ও পশ্চিমারা। অধিকৃত অঞ্চলগুলোকে রাশিয়ার সীমানাভুক্ত করতে এই গণভোটের ‘নাটক’ সাজানো হয়েছে বলে দাবি তাদের।এই চারটি অঞ্চল ইউক্রেনের প্রায় ১৫ শতাংশ এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। রাশিয়া সেগুলোকে নিজের সীমানাভুক্ত করার পর দাবি করতে পারবে, ইউক্রেনকে দেওয়া ন্যাটো জোট ও পশ্চিমা দেশগুলোর অস্ত্র দিয়ে তাদের ভূখণ্ডে আক্রমণ চালানো হচ্ছে।

সম্প্রতি মস্কো আরও তিন লাখ বাড়তি সৈন্যকে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য তলব করেছে। রাশিয়া প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ রণক্ষেত্র প্রতিরক্ষায় এদের মোতায়েন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর নিজস্ব ভূখণ্ড রক্ষায় প্রয়োজনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকিও দিয়ে রেখেছে ক্রেমলিন।গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়ার বিপক্ষে মত দেওয়া থেকে বেশিরভাগ সময়ই বিরত থেকেছে ভারত, যা যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোকে ক্ষুব্ধ করেছে। ইউক্রেনে আগ্রাসনের কারণে রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন ধরনের রেকর্ড সংখ্যক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পশ্চিমারা। তাদের ইচ্ছা, ভারতের মতো মিত্র দেশগুলোও একই পথ অনুসরণ করুক।তবে ইউক্রেন ইস্যুতে ভারত কখনোই সরাসরি রাশিয়ার সমালোচনা করেনি। বরং তারা উভয়পক্ষকে কূটনীতি ও আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ মেটানোর আহ্বান জানিয়েছে এবং এ বিষয়ে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।ভারত বর্তমানে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য। এই পদে তাদের দুই বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ডিসেম্বরে।

দেশটি বহুদিন ধরেই পরিষদের স্থায়ী সদস্য হওয়ার চেষ্টা করছে।আর গত কয়েক মাসে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়েছে চীনের। ইউক্রেন সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার পর রাশিয়া থেকে চীনের জ্বালানি আমদানি শতকরা ৭৫ ভাগ বেড়ে গেছে। চীন যেখানে রাশিয়া থেকে বছরে দুই হাজার কোটি ডলারের তেল, গ্যাস এবং কয়লা কিনতো, সেখানে গত মার্চ মাস থেকে জুলাই মাসের মধ্যেই সাড়ে তিন হাজার কোটি ডলারের জ্বালানি কিনেছে বেইজিং।

সূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি, এনডিটিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *