পীরগঞ্জ নিউজ এক্সপ্রেস ডেক্স :
#৫ লাখ টাকা অগ্রিম ও মাসে ১ লাখ টাকা ভাড়ায় এক ব্যক্তিকে জায়গা ইজারা দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ
#যে শ্রেণিকক্ষ বাস কাউন্টারের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে, আগে সেখানে শেখ রাসেল ডিজিটাল সেন্টার ছিল
রাজধানীর সায়েদাবাদের রিজাউল করিম চৌধুরী কলেজের (আর কে চৌধুরী কলেজ) শ্রেণিকক্ষের দেওয়াল ভেঙে গড়ে তোলা হচ্ছে আন্তঃজেলা বাস কাউন্টার। শিক্ষকদের বেতন-ভাতাদি দিতে পারছেন না বলে এভাবে আয়ের পথ তৈরির করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ব্যবস্থাপনা কমিটি। অথচ শিক্ষার্থী বাড়ানোর কোনো চেষ্টা নেই তিন দশকের বেশি বয়সী কলেজটির। স্থানীয় সংসদ সদস্যও বিষয়টি নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন।কলেজের সামনের অংশে এভাবে আন্তঃজেলা বাস কাউন্টার তৈরি করার ক্ষোভ প্রকাশ করছেন কলেজটির সাধারণ শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকেরা। তাদের অভিযোগ, নিজস্ব আয় বাড়ানোর নামে কলেজের নিচ তলার একাংশ একটি প্রভাবশালী চক্রকে ইজারা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাদের ভয়ে কেউ এর প্রতিবাদ করতেও সাহস পাচ্ছেন না। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এখন কলেজটিতে শিক্ষার পরিবেশই আর থাকলো না।কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, অর্থ সংকটের কারণে তারা এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ঠিকমতো দিতে পারছেন না। সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং কর, বিদ্যুৎ বিলসহ অন্য খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই কলেজের একাংশে বাস কাউন্টার করার জন্য ইজারা দিয়েছেন। তবে বিষয়টি যুক্তিযুক্ত কি না তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি তারা।আমরা কলেজের শিক্ষাকদের বেতন দিতে পারি না। কয়েকজন শিক্ষকের প্রায় ২০ মাসের বেতন বাকি। তাই কলেজের জায়গা বাস কাউন্টারের জন্য ভাড়া দিয়েছে ব্যবস্থাপনা কমিটি।- অধ্যক্ষ জহিরুল হক মৃধাকলেজটিতে ব্যবস্থাপনা, সমাজকর্ম, মার্কেটিং, হিসাব বিজ্ঞান ও ফিন্যান্স বিভাগ রয়েছে। শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন প্রায় ৬০ জন। আর শিক্ষার্থীর মাত্র ৭৯ জন। এতে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনের এমপিওর অংশ দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। তাই কলেজের সামনের অংশ আব্দুর রহিম নামে এক ব্যক্তিকে ইজারা দেওয়া হয়েছে। শর্ত অনুযায়ী এই ব্যক্তি কলেজের তহবিলে এককালীন পাঁচ লাখ টাকা জমা দিয়েছেন। আর মাসে ভাড়া বাবদ এক লাখ টাকা করে দেবেন।বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সরেজমিনে দেখা যায়, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের ঠিক পূর্বপাশে আর কে চৌধুরী কলেজের অবস্থান। ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজ ভবনটি ছয় তলা। এর মধ্যে ফটকের উত্তর পাশে একটি বড় শ্রেণিকক্ষ ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেখানে ছোট আকারের কয়েকটি দোকান ঘরের মতো তৈরি করা হচ্ছে। আর দক্ষিণ পাশে শ্রেণিকক্ষের দেওয়াল, জানালা ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে টিনশেড স্থাপনা। সেখানেও ছোট ছোট দোকানের মতো তৈরি করা হচ্ছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর কে চৌধুরী কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক ছাত্র বলেন, যে শ্রেণিকক্ষটি ভেঙে বাস কাউন্টার করা হচ্ছে সেখানে আগে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব ছিল। এখন সেটি ভেঙে ফেলায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। আর কলেজে অবকাঠামো, শিক্ষার পরিবেশও ভালো না।সায়েদাবাদের প্রবীণ বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান। কলেজের স্থাপনায় এমন কর্মকাণ্ড দেখে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। মোস্তাফিজুর বলেন, কলেজটি সায়েদাবাদ তথা যাত্রাবাড়ী এলাকার মধ্যে অন্যতম পুরোনো কলেজ। হাজারো ছেলে-মেয়ে এই কলেজে পড়াশোনা করে দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে। অথচ আজ কলেজের ভেতর বাস কাউন্টার করা হচ্ছে। প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না।জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ জহিরুল হক মৃধা বলেন, ‘আমরা কলেজের শিক্ষাকদের বেতন দিতে পারি না। কয়েকজন শিক্ষকের প্রায় ২০ মাসের বেতন বাকি। তাই কলেজের জায়গা বাস কাউন্টারের জন্য ভাড়া দিয়েছে ব্যবস্থাপনা কমিটি।’নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর কে চৌধুরী কলেজের এক শিক্ষক বলেন, কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আমজাদ হোসেন। তিনি যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন। স্থানীয় পর্যায়ে তার অনেক প্রভাব রয়েছে। তাই তিনি কলেজের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে কেউ তার প্রতিবাদ করতে পারেন না।
এখন কলেজের ভেতর যেভাবে বাস কাউন্টার তৈরি করা হচ্ছে, এতে কলেজের শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংস হবে।তবে যে জায়গায় বাস কাউন্টার তৈরি করা হচ্ছে, সে জায়গাটি দীর্ঘদিন খালি ছিল বলে দাবি করেছেন আর কে চৌধুরী কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘কলেজের সামনে যে জায়গায় বাস কাউন্টার তৈরি করা হচ্ছে, সেটি ফাঁকা ছিল। সেখানে শ্রেণিকক্ষ বা ভবনের কোনো অংশ ছিল না। ফাঁকা জায়গাটিতে অনেকের (দখলদার) চোখ পড়েছে। এছাড়া কলেজে ছাত্র সংখ্যা কম থাকায় দীর্ঘদিন শিক্ষকদের বেতন দিতে পারি না। এজন্য কলেজের জায়গায় বাস কাউন্টারের জন্য একজনকে ইজারা দেওয়া হয়েছে।’কলেজের সামনে বাস কাউন্টার তৈরির বিষয়টি নিয়ে মহল্লার কয়েকজন অভিযোগ জানিয়েছেন। তাই কাজ বন্ধ রাখতে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশকে বলা হয়েছে। আর এ জায়গায় বাস কাউন্টার করলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হওয়ার বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শিগগির কথা বলবো।– স্থানীয় সংসদ সদস্যতিনি বলেন, ‘এই কলেজের আশপাশে আরও শত শত বাস কাউন্টার রয়েছে। এখানে অন্য কোনো দোকান দিলে বেশি ভাড়া পাবো না। তাই বেশি আয়ের জন্যই এ কাজ করা হচ্ছে।’তবে কলেজে বাস কাউন্টারের ফলে শিক্ষার পরিবেশ কতটা ঠিক থাকবে, কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা না বাড়িয়ে কেন এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হলো তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি আমজাদ হোসেন।সায়েদাবাদ এলাকাটি ঢাকা-৫ আসনের আওতাধীন। এ আসনের সংসদ সদস্য মশিউর রহমান মোল্লা সজল। আলাপকালে তিনি বলেন, ‘কলেজের সামনে বাস কাউন্টার তৈরির বিষয়টি নিয়ে মহল্লার কয়েকজন অভিযোগ জানিয়েছেন। তাই কাজ বন্ধ রাখতে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশকে বলা হয়েছে। আর এ জায়গায় বাস কাউন্টার করলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হওয়ার বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শিগগির কথা বলবো।’