Subscribe our Channel

শিক্ষায় মেগা বাজেটের প্রত্যাশা বিশেষজ্ঞদের

মুরাদ হুসাইন :  করোনা পরবর্তীকালের বাজেটে শিক্ষাখাতে মেগা বরাদ্দের প্রত্যাশা করছেন বিশেষজ্ঞরা। শিক্ষাবিদদের পরামর্শ, সরকার যেভাবে শিক্ষায় পরিবর্তনের কথা ভাবছে তাতে এ খাতে মেগা বরাদ্দ দিতে হবে। সেজন্য মোট বাজেটের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে।বিশেষজ্ঞরা জানান, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে এ খাতে বরাদ্দ জিডিপির ৪ শতাংশের বেশি হলেও ২০ বছর ধরে আমাদের তা অর্ধেকেরও তলানিতে রয়ে গেছে। বরাদ্দ ৪ শতাংশ ছাড়া মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন তারা।নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী যে ধরনের পরিবর্তনের কথা আমরা ভাবছি তার জন্য আগামী বাজেটে শিক্ষাখাতে মেগা বরাদ্দ দিতে হবে। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে চাইলে শিক্ষায় বাজেট বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। করোনা মহামারিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের শিক্ষাখাত। শিক্ষা পুনরুদ্ধার পরিকল্পনায় যেমন ঘাটতি রয়েছে, তেমনি চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দও ছিল গতানুগতিক।

২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৭১ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৯১ শতাংশ এবং জিডিপির ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৬৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ২ দশমিক ০৯ শতাংশ। অর্থাৎ টাকার অঙ্কে বরাদ্দ বাড়লেও জিডিপির হিসাবে তা কম ছিল।শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের চলমান উন্নয়নকে টেকসই করতে শিক্ষাখাতে উল্লেখযোগ্য হারে বাজেট বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।আগামী ৫ জুন বসছে বাজেট অধিবেশন। অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বাজেট উত্থাপন করবেন ৯ জুন।এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. তারিক আহসান জাগো নিউজকে বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী যে ধরনের পরিবর্তনের কথা আমরা ভাবছি তার জন্য আগামী বাজেটে শিক্ষাখাতে মেগা বরাদ্দ দিতে হবে। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে চাইলে শিক্ষায় বাজেট বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। বর্তমানে এ খাতে আমাদের বাজেট জিডিপির দুই থেকে আড়াই শতাংশ হয়ে থাকে, সেটি দ্বিগুণ করতে হবে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাব্যবস্থাপনা- এই চারটিতে যদি আমরা যথাযথ বিনিয়োগ না করি, তাহলে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছাতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হবে। শুধু বাজেটে বরাদ্দ বাড়িয়েই দায়িত্ব শেষ করলে হবে না, শিক্ষায় সুশাসনও নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, শিক্ষার ক্ষেত্রে গুণগত স্থানগুলোতে আমাদের পরিবর্তন আনা বেশি দরকার। তার মধ্যে শিক্ষকদের দক্ষতা-অভিজ্ঞতা, শিখন ম্যাটেরিয়াল, মনিটরিং সুপারভিশনে পরিবর্তন ও আধুনিকায়ন বেশি জরুরি। শুধু অবকাঠামো ও সংখ্যা দিয়ে পরিমাণ করা যাবে না। এসব বিষয়ে পরিবর্তন না এলে শিক্ষায় পরিবর্তন আসবে না। করোনার মতো যেকোনো মহামারি পরিস্থিতি সামাল দিয়ে যেন শিক্ষাব্যবস্থা চলমান রাখা সম্ভব হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

এই শিক্ষাবিদ আরও বলেন, ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো দেশে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ থেকে আমরা পিছিয়ে আছি। ভারতে শিক্ষাখাতে জিডিপির ৫-৬ শতাংশ, পাকিস্তানে প্রায় ৪ শতাংশ আর আফগানিস্তানে প্রায় সাড়ে ৩ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়। আমরা শিক্ষাকে পরিমাণগতভাবে দেখার চেষ্টা করেছি। গুণগতভাবে দেখতে হলে সেভাবে বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন, তা দেওয়া হয়নি। সে কারণে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে শিক্ষায় বরাদ্দে অনেক পিছিয়ে রয়েছি। আমাদের এখন এটিকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে বরাদ্দ দিতে হবে। উন্নত দেশগুলো শিক্ষকদের যে হারে সুবিধা ও সম্মান দিচ্ছে আমাদেরও সেদিকে অগ্রসর হতে হবে। তবে শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানো সম্ভব হবে।গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাব্যবস্থাপনা- এই চারটিতে যদি আমরা যথাযথ বিনিয়োগ না করি, তাহলে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছাতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হবে। শুধু বাজেটে বরাদ্দ বাড়িয়েই দায়িত্ব শেষ করলে হবে না, শিক্ষায় সুশাসনও নিশ্চিত করতে হবে।তিনি বলেন, শিক্ষাখাতে আমাদের বরাদ্দ পুরো দক্ষিণ এশিয়া তো বটেই, বিশ্বের মধ্যেও তলানিতে। আমাদের প্রত্যাশা শিক্ষাকে এবার একদম পূর্ণাঙ্গ একটি সেক্টর হিসেবে দেখা হবে।

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক শেখ ইকরামুল কবির  পীরগঞ্জ নিউজ  এক্সপ্রেসকে বলেন, এবার শিক্ষাখাতে বরাদ্দ জিডিপির ৪ শতাংশ হওয়া উচিত। গত ২০ বছর ধরে সেটি ২ শতাংশের বেশি যায় না। এটি বাড়ালে দেশে যে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে গেছে তা সামাল দিতে শিক্ষার উপকরণগুলোতে যে ভর্তুকি দেওয়া হয়, তা সামাল দেওয়া সম্ভব হবে। শিক্ষাখাতে মূল বাজেটের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে।তিনি বলেন, করোনার কারণে শিক্ষার্থীরা অনেক পিছিয়ে পড়েছে। শিক্ষায় সরকারের ভর্তুকি রয়েছে, সেটি আরও বাড়ানো প্রয়োজন। গুণগত শিক্ষার জন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত কমাতে হবে।

বর্তমানে এ হার যে পরিমাণে রয়েছে তাতে শিক্ষার মান বাড়ানো অসম্ভব। এখনও সব সুবিধা শহরকেন্দ্রিক রয়ে গেছে। তথ্যপ্রযুক্তি গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে মফস্বলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার আহ্বান জানান এই শিক্ষাবিদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *