Subscribe our Channel

তেঁতুলিয়ায় সোনালী আঁশ পাট কাটা-ধোয়ায় কাজে ব্যস্ত কৃষাণ-কৃষাণীরা
মুুহম্মদ তরিকুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় সোনালী আঁশ পাট সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণীরা। প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে গ্রাম অঞ্চলে পাট থেকে আঁশ কাজে ব্যস্ত থাকেন কৃষকরা। গাছ পাট দীর্ঘদিন পানিতে ভিজিয়ে রেখে তা পঁচে যাওয়ার পর তা থেকে আঁশ পাট সংগ্রহ করে থাকেন কৃষকরা।
গত কয়েকদিনে তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চলে ঘুরে দেখা যায়, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, নারী-পুরুষ মিলে রাস্তার পাশে বসে কিংবা বাড়ির উঠোনে বসে গাছ পাট থেকে আঁশ সংগ্রহ করছেন।

আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে যখন বর্ষার পানিতে খাল-বিল, ডোবা-নালা ভরে ওঠে সোনালী স্বপ্ন নিয়ে সোনালী আঁশ ঘরে তুলতে বেড়ে যায় কৃষক-কৃষাণীর ব্যস্ততা। প্রতি বছরের মতো চলতি মৌসুমে তেঁতুলিয়ায় নতুন পাট ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এলাকার কৃষক-কৃষাণীরা। এখন চলছে পাটের আঁশ ছাড়ানো ও রোদে শুকানোর কাজ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ডোবা ও বিলের পানির মধ্যে জাগ (পচাতে) দেওয়া পাট থেকে আঁশ ছাড়াচ্ছেন কৃষক।

শুধু কৃষক নয় এলাকায় পাটকাঠির চাহিদা থাকায় কৃষকদের সঙ্গে প্রতিবেশিরাও আঁশ ছাড়িয়ে দিয়ে পাটকাঠি সংগ্রহ করছেন। তেঁতুলিয়ায় সোনালী আঁশ সংগ্রহে ব্যস্ত কৃষকরা।

উপজেলার নাওয়াপাড়ায় সোনালী আঁশ ছাড়ানো মালেকা জানান, তিনি প্রতি লাছা ২০ (বিশ) টাকা থেকে ২৫ (পচিশ) টাকা করে দিনে ৭ থেকে ৮লাছা পাট থেকে আঁশ ছাড়াচ্ছেন। এতে তার দিনে দেড়’শ থেকে ২শ টাকা আঁশ ছাড়ানো কাজে রোজগার হয়।
ইতোমধ্যে বাজারে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। দামও ভাল। উপজেলার শালবাহান ও ভজনপুর হাটে বিভিন্ন জাতের পাট বেচা-কেনা হচ্ছে।

 

 

 

 

 

 

 

 

তোষা জাতের পাট ২ হাজার ৫শ থেকে ২ হাজার ৮শ টাকা আর মেচতা জাতের পাট ১ হাজার ৮শ থেকে ২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে ন্যায্য মূল্য পেয়ে পাট চাষীদের মাঝে এখন পাট চাষে আগ্রহ বাড়ছে। এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক বিঘা জমিতে পাট চাষে খরচ হয় ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা। ফলন ভাল হলে এক বিঘা জমিতে ১২ থেকে ১৮ মণ পাট পাওয়া যায়।

উপজেলা সদর ইউপির গড়িয়াগছ গ্রামের কৃষক নুরজামান জানান, এবার জমিতে পাট চাষ করেছিলাম পাটও ভালো হয়েছে এবং অন্য বছরের তুলনায় দাম বেশি হওয়ায় লোকসানে পড়তে হচ্ছে না।
উপজেলার ৬নং ভজনপুর ইউপির ভাঙ্গিপাড়া গ্রামের কৃষক ওবায়দুল হক ও ভুতিপুকুর গ্রামের আজিজুল হক বলেন, মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ায় পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন তবে পড়ে বৃষ্টি হওয়ার কারণে ফলন ভালো হয়েছে তাদের। এবার তারা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন বাজারে পাটের মূল্য বেশি হওয়ার কারণে আগামী বছর আরো বেশি জমিতে পাট চাষ করবেন তারা মনে করছেন।

স্থানীয় পাট ব্যবসায়ী রিয়াজুল ইসলাম জানান, এ বছর পাটের দাম ভাল। হয়তো কৃষক লাভের মুখ দেখতে পাবেন। ন্যায্য মূল্য পাওয়ার আশায় উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের কালদাসপাড়া গ্রামের কৃষক মতিরুল ইসলাম তিনি এ বছর প্রায় দেড় বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। একই গ্রামের মফিজুল হক প্রায় তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাযায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৯৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর পাটের আবাদও হয়েছে ৯৫০ হেক্টর জমিতে।

 

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ উপজেলায় সোনালী আঁশ পাটের চাহিদা কম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তোষা জাতের পাটের আবাদই বেশি করেন এ এলাকার কৃষকরা। এলাকার কৃষকরা যাতে সকল জাতের পাট আবাদে আগ্রহী হয় ও যথাযথভাবে উৎপাদন করতে পারে এবং স্বল্প খরচে উচ্চ ফলনশীল পাট উৎপাদন করতে পারে এ জন্য প্রতিনিয়ত কৃষকদেরকে পরামর্শ প্রদান করেছেন। বিভিন্ন রোগবালাই থেকে পাটকে মুক্ত রাখতেও পরিমিত পরিমান ঔষধ প্রয়োগের পরামর্শ দিয়ে আসছেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *