Subscribe our Channel

জয়যাত্রা টিভিতে বিজ্ঞাপন দিত ‘জিনের বাদশা’

পীরগঞ্জ নিউজ এক্সপ্রেস ডেক্সঃ

জিনের বাদশা পরিচয়দানকারী মো. আল আমিন হেলেনা জাহাঙ্গীরের জয়যাত্রা টেলিভিশনের বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মসহ কেবল নেটওয়ার্কের লোকাল চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দিতেন। এসব বিজ্ঞাপনে জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করা, বিদেশে যাওয়ার সুব্যবস্থা করা, মামলা-মোকদ্দমা থেকে মুক্তি লাভ, দাম্পত্য কলহ দূর করা, বিয়েতে বাধা দূর করা, অবাধ্যকে বাধ্য করা, চাকরিতে পদোন্নতিসহ নানা সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় থাকত বিজ্ঞাপনে। সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন মানুষ যোগাযোগ করলে তাদের ফাঁদে ফেলে এবং পরবর্তীতে তাদের কথা অনুযায়ী কাজ না করলে প্রিয়জনের ক্ষতির ভয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিত কথিত জিনের বাদশা চক্র।

 

 

মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) ভোলা জেলায় অভিযান চালিয়ে এ চক্রের মূলহোতা মো. আল আমিনকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বুধবার ভোররাতে রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় তার দুই সহযোগী রাসেল ও সোহাগকে। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন, তিনটি সিম, একটি রাউটার, একটি পাসপোর্ট, দুটি চেক বই, একটি ভিসা কার্ড ও ডিভাইস জব্দ করা হয়।

 

বুধবার (৪ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মুক্তা ধর।

 

 

 

তিনি বলেন, ‘জয়যাত্রা আইপি টিভিসহ বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দিত জিনের বাদশা চক্রটি। ওই বিজ্ঞাপনে একটি মোবাইল নম্বর দেয়া হতো। সেই নম্বরে ফোন দিলে একজন ফোন রিসিভ করে ফোনদাতার কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য নিতেন। পরে ওই ফোনদাতাকে বলা হতো তাদের সঙ্গে গরিব মানুষকে একবেলা খাবার দিতে হবে। এজন্য ৯৯৯ টাকা বা ১১১১ টাকা পাঠাতে হবে। টাকা পাঠানোর পর জিনের বাদশার নম্বর দিয়ে বলা হতো, রাত ২টা থেকে ৩টার মধ্যে ফোন করলে জিনের বাদশা কথা বলবেন। টাকা দেয়ার পরবর্তী ধাপে ওই নম্বরে ফোন দিলে একজন পুরুষ ফোনটি রিসিভ করেন। সালাম বিনিময়ের পর পরিবারের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য নেন। জিন-পরীর যে মা আছেন তার সাথে কথা বলিয়ে দেবেন। পরে সাধনা করে সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে।’

 

 

 

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘ছয় মাসে তাদের কাছ থেকে ৬০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের জব্দ করা ব্যাংক হিসাবে ১২ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। এখানে আমরা কয়েকজন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে যে তথ্য পেয়েছি সেটা অর্ধকোটি টাকা। তাদের কাছ থেকে তদন্ত করলে এর পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা হতে পারে।’

 

 

 

 

 

সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘চট্টগ্রামের এক নারীর স্বামী বিদেশ থাকেন। তার দুরারোগ্য ব্যাধি ছিল। এই রোগ থেকে মুক্তির আশায় টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন দেখে “জিনের বাদশা”কে ফোন করলে ওই ভুক্তভোগী নারীকে বলা হয়, তার সমস্যার সমাধান করা হবে। জিনের বাদশা নামধারী চক্রটি ওই নারীকে ফাঁদে আনার জন্য প্রথমে ৯৯৯ টাকা নেয়। তবে এই টাকা গরিব মানুষদের খাওয়ানো হবে বলে জানানো হয়। এরপর ধাপে ধাপে “জিনের বাদশা”র সঙ্গে কথা বলে দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় প্রায় ২২ লাখ টাকা খোয়ান ওই নারী। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে প্রিয়জনের ক্ষতির ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করে আত্মসাৎ করত চক্রটি। গত ছয় মাসে চক্রটি বিভিন্নজনের কাছ থেকে ৬০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এরপর ওই নারী প্রতারণার শিকার হয়েছেন বুঝতে পেরে চট্টগ্রামের খুলশী থানায় মামলা করেন।’

 

 

 

সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার খায়রুল আমিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান ও সহকারী পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *