Friday, 14 March 2025, 11:51:21 pm

Subscribe our Channel

জানা-অজানার গল্প নরক দর্শনের কিছু অভিজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ
জয়ন্ত রায় বোচাগঞ্জ, দিনাজপুরঃ
আমি তখন ছোট, সাত আট বছরের বেশি না। তখন আমার নানী একবার মারা গেছিল। একবার মারা গেছিল, কথাটা শুনতে আপনাদের একটু অবাক লাগছে। শুনুন তাহলে,
একরাত মৃত দেহ পড়ে ছিল বাড়ির বারান্দায়। মাথার পাশে তুলশী দেবীর গাছ লাগানো হয়েছিল। প্রদীপ জ্বালানো হয়েছিল। বাড়ির লোকজন, বিশেষ করে মহিলারা কান্নাকাটি করছিল। আশে পাশের আত্মীয় স্বজনদের খবর দেয়া হয়েছিল। এখন কার মতো তখন মোবাইল ছিল না,  কাউকে কোন খবর দিতে হলে সরাসরি দেখা করে খবর দিতে হতো। নানী মারা গেছিল বেলা ডোবার পরপরই। তাই সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, রাতের মধ্যে আর লাশ দাহ করা হবে না। সকাল সকাল আত্মীয় স্বজনদের খবর দেয়া হবে। আর এগারো বারোটার মধ্যে দাহ করা হবে। ছোট মাসীর তখনও বিয়ে হয় নি। মেজো মাসির বাড়ি মামা বাড়ি থেকে খুব দূরে ছিল না। তারা রাতেই নানীকে দেখতে গেছিল। শুকনো লাকড়ি কেউ চিড়ে দিচ্ছিল। সারা রাত জেগেই ছিল সবাই। ভোর রাতে পূর্ব আকাশে যখন ধীরে ধীরে সাদা আলো বেড়ে যাচ্ছিল, তখন হঠাৎ নানী -ও ওহো, করে উঠলো। পাশে যে ক’জন বসে ছিলো,  তারা ভূত দেখার মতো চমকে উঠে পড়িমরি করে তফাতে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল।
কে যেন বলেই ফেলল, বুড়ী ভূত হয়েছে। কিছুক্ষণ পর আবার নানী ওহ্, মাগো, একটু জল দাও গো বলে উঠলো। ছোট মাসি জল চামচ দিয়ে মুখে দিলেন। জল খেয়ে চোখ খুললো নানী। অনেকেরই তখন ভয় কেটে গেছে। বললো, আমাকে একটু তুলো। মামী মাসি মিলে নানীকে তুলে দেয়ালে হেলান দিয়ে রাখলেন। নানী তারপর যে কথাটি বললো, বড় বেটি কই, বড় বেটিক খবর দেও, বড় বেটিক দেখার ইচ্ছা করছে।
নানীর বড় বেটি, আমার মা। আমরা তখনও কোনো খবর জানি না। তারপর নানী বলতে থাকে তার কি হয়েছিল।  কি কি দেখেছে। সব বলতে থাকে। সে যেন স্বপ্ন দেখছে। এরকম এক স্বপ্নের মাঝে দুটো লোক এসেছে, তাদের ভীষণ দর্শন চেহারা, মোটা, লম্বা, কালো গায়ের রং, মাথায় মহিষের মতো শিং, হাতে গদা। লোক দুটো এসে নানীকে নিয়ে যায়। যেতে থাকে দূরের কোন পথে। রাস্তার দু পাশে জংগল আর জংগল। এক সময় জংগল শেষ হয়। তারপর শুরু হয় ধূ ধূ মাঠ। যতদূর চোখ যায়, কোন গাছপালা তো দূরের কথা, একটা ঘাসের গাছও চোখে পড়ে না। লোক দুটো নানীর দু পাশে দু হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এক সময় ধূধূ প্রান্তরের শেষ হয়। তারপর শুরু হয় পাহাড়, পাহাড়ী রাস্তা। মোটা রাস্তা ধীরে ধীরে এমন সরু হয়ে গেল, যে সূচের ডগার মতো সরু। ঐ রাস্তা দিয়ে নানীকে নিয়ে যাচ্ছে দু জন যম দূত। দেখতে দেখতে পথের শেষে একটা বড়ো নদী পড়লো, কিন্তু নদী কিভাবে পার হলো সেটা নানীর মনে নাই। নদীর পাড়ে বিশাল লম্বা একটা ঘর। সে ঘরে অসংখ্য সাপ আর সাপ। নানী সেখানে দেখতে পেল তাদের পাড়ার এক মহিলাকে। মহিলা ছয় সাত মাস আগে সাপের কামড়ে মারা গেছিল। নানী মহিলাকে বলল, কি গো কুনালের মা, কি করছিস। মহিলার ছেলের নাম কুনাল। কুনালের মা নানীকে বলল, কি তুমি সাপের কামড়ে মরেছিস নাকি। নানী বলল, না, আমি সাপের কামড়ে মরি নি। কুনালের মা বলল, কি করবো বোন, সাপের কামড়ে যারা মারা যায় তাদের কাজ হচ্ছে এখানে সাপের যত্ন নেয়া। সাপকে ঝাঁপি থেকে বের করে দিতে হয়,  স্নান করাতে হয়, খাবার দিতে হয়, রাতে আবার ঘরে ঢোকাতে হয়। এভাবেই চলতে থাকে। রাজ কেমন আছে। কুনালের একটাই ছেলে রাজ। নানী ভালো মতো চিনতো, বলল, ভালো আছে। কুনালের মা নানীকে বলল, মরার আগে আমার গহনা গুলো রাজকে দিয়ে আসতে চেয়েছিলাম। তা আর হলো না দিদি। নানী বলল, আমারও শেষ ইচ্ছা ছিল, বড় মেয়ে টাকে দেখবো। কিন্তু তা কি আর হবে। হবে না। নানীকে আরও সামনে নিয়ে যায় যমদূতেরা। সেখানে নানী দেখতে পায় তার ভাসুর অমর কে। এক লোক তাকে দৌড় করিয়ে বেড়াচ্ছে। আর বলছে, শালা, আমার বউকে কেন বউ বানালি। তুই না বিয়ে করলে ও আমার নাম নিয়েই থাকতো। নানী বুঝতে পারলো, এই লোকটা বৈদ্যের ছোট মা এর বিবাহিত স্বামী। লোকটা মারা গেলে নানীর বড় ভাসুর তাকে ঘরে তুলে। কেন তুললো এই দোষে দৌড় করিয়ে বেড়াচ্ছে বড় নানাকে। এরপর এক লোকের কাছে নিয়ে গেল নানীকে। লোকটি খাতা পত্র ঘাটাঘাটি করছে। নানীকে লোকটি নাম জিজ্ঞাসা করল, নানী নাম বলল, লোকটি খাতাপত্র ঘেটে বলল, এতো সে নয়, অন্য জনকে ভুল করে নিয়ে এসেছ। একে তাড়াতাড়ি ফেরত পাঠাও। নানীকে বলল, তুমি ভাগ্যবান। নরক দর্শন করলে। এরপর ফিরে গিয়ে কিছু ধর্ম কর্ম করো, যেন আর নরকে আসতে না হয়।
অ্যাপায়ন সরূপ সেখানে দুধ আর কলা খাওয়ানো হয় নানীকে। তারপর দূত দুটো নানীকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। ঐ কুনালের মা, নানীকে ফিরতে দেখে বলে, তার গহনাগুলো কোথায় পুতে রেখেছে সে সেটা বলে।
 নানীর এ ঘটনার সত্যতা সরূপ, বলে দেওয়া জায়গায় গহনা গুলো পায়, কুনাল আর রাজ।
এক মেসো তান্ত্রিক ছিল, সেই মেসো বলল, যেহেতু নানী জীবন ফিরে পেয়েছে। তাই জীবনের পরিবর্তে জীবন দিতে হয়। একটা হাঁস কাটা হয়, আর সে হাঁস টা পুঁতে ফেলা হয়।
এ ঘটনা আমি আমার নানীর কাছে শুনি। আমাদের সব অাত্মীয় স্বজন এ ঘটনা জানে। নানী এবার সত্যি সত্যি ধর্ম কর্ম শুরু করলো। গলায় তুলশী মালা ধারন করলো। ব্রতগুলো করতে শুরু করলো।
এই ঘটনার দশ বছর পর নানী মারা যায়।
এবার সত্যি না ফেরার দেশে চলে যায় নানী।
*সংগৃহীত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *