
মোঃ কামাল হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধি : যশোরে আমিষের চাহিদা মেটাতে বাজার থেকে যে মাছ কিনে খাচ্ছি তা কি শুধু আমাদের চাহিদা মেটাচ্ছে? নাকি ভবিষ্যৎ জীবনে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনছে— তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আভয়নগরে রাতের আধারে অনেক খামারেই এখনো মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয় মুরগির বিষ্ঠা ও আবর্জনা। কিন্তু এ ধরনের প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত মাছ মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে সতর্ক করছেন গবেষকরা। অভয়নগরে মৎস্য ঘেরে পরিবেশ দূষণকারী পোলট্রি লিটার ব্যবহার করা হচ্ছে। এই পোলট্রি মুরগির বিষ্ঠা প্রয়োগ করায় নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ ও প্রতিবেশ। হুমকিতে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। যে কারণে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় মহাকাল এলাকার বিনয় কুন্ডুর ছেলে বিকাশ কুন্ডুকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করে আভয়নগরের ভ্রাম্যমান আদালত। ভ্র্যাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন আভয়নগরের এসিল্যান্ড ডাঃ তানজিলা আখতার। অভিযান আরো উপস্থিত ছিলেন অভয়নগর মৎস সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ফিরোজ কবির, অভয়নগর থানার এস আই শাহ্ আলম।
এলাকাবাসির কাছ থেকে জানা যায়, উপজেলার ধোপাদী, সুন্দলী, ডুমুরতলা, সড়াডাঙ্গা , আড়পাড়া,আমডাঙ্গা, লক্ষীপুর, বারান্দি, ফকিরহাট,সরখোলা, প্রেমবাগ, চেঙ্গুটিয়া, ধলিগাতি, ধোপাপাড়াসহ আশপাশের গ্রামের অনেকেই এই পরিবেশ ধ্বংসকারী পোলট্রি মুরগির বিষ্ঠা মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করছে। উল্লেখ্য, গত বছর উপজেলা মৎস্য অফিসের সহযোগিতায় ইউনিয়নের আমডাঙ্গা গ্রামের মৎস্য ঘেরে অভিযান চালানো হয়। অভিযানের এক পর্যায়ে রাজাপুর সড়ক থেকে অবৈধ পোলট্রি লিটার বহনের দায়ে একটি ট্রাক (ঢাকা মেট্রো ড- ১৪-৬৯৯৭) জব্দ করা হয়। পোলট্রি লিটার বহনের দায়ে যশোর রেল রোডের জয়নাল আবেদিনের ছেলে ট্রাক মালিক আশিক সিদ্দিকীকে মৎস্য ও পশুখাদ্য আইন ২০১০ এর ১২/১ (ক) ধারায় ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট । পরে এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে ঘটনাস্থলে ট্রাকভর্তি পোলট্রি লিটার বিনষ্ট করা হয়।
তার কিছুদিন পর ওই চক্রটি আবার সক্রিয় ওঠে। দিন দিন এলাকায় পোলট্রি মুরগির বিষ্ঠার ব্যবহার বেড়েছে। মুরগীর বিষ্টা দিয়ে মাছ চাষ করা খামারের ৯০ ভাগ মাছে ‘ডিবিউটিলিন’ এবং ‘ডাইঅক্সিন’ নামের মারাত্মক ক্ষতিকর রাসায়নিকের উপস্থিতি পান এসব মাছের মাংসে ভয়ংকর রাসায়নিক ‘ডাইঅক্সিন’ যা মানবদেহে প্রবেশ করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। এ দূগন্ধ যুক্ত মুরগীর বিষ্টা মাছকে খাওয়ালে মাছগুলো দ্রুত বেড়ে ওঠলেও একই সঙ্গে বিষাক্ত হয়ে ওঠে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষকরা জানিয়েছেন, ওইসব খাবার ও রাসায়নিক দ্রব্যে থাকে নানা ধরনের ক্ষতিকর মাইক্রোসেলসহ এক ধরনের সিসা বা লেড। যা মাছের মধ্য দিয়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। ক্ষতিকর মুরগীর বিষ্টায় থাকা রাসায়নিক ও সিসা প্রবেশ করার ফলে হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন রোগ, বন্ধ্যত্ব, ক্যান্সার, স্মৃতি লোপ, আর্থ্রাইটিস, অ্যাজমা ও কিডনি ড্যামেজ পর্যন্ত হতে পারে। রাসায়নিকের প্রতিক্রিয়া হিসেবে মাছ রান্নার পর উৎকট গন্ধ ও মাছের কাঁটা মাত্রাতিরিক্ত শক্ত হওয়া এর লক্ষণ। এ বিষয়ে মৎস্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক গোলজার বলেন, ‘মুরগি পালনে নানা রকম অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার হয়। যেগুলো মুরগির বিষ্ঠার মাধ্যমে মাছের শরীরে প্রবেশ করে। এগুলো ধ্বংস হয় না।
তাই এগুলো মাছের মাধ্যমে পরে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে স্বাস্থ্যের ক্ষতি ঘটায়। এ জন্য কয়েক বছর আগেই মাছের খাবার হিসেবে মুরগির বিষ্ঠা নিষিদ্ধ করেছে সরকার।’ কিন্তু এর পরও কেন এ পদ্ধতির ব্যবহার হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেকে এখনো গোপনে গভীর রাতে বিষ্টা মৎস ঘেরে মাছের খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করে। এটা উপজেলা বা মৎস অধিদপ্তর জানতে পারলে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।’