
মোঃ বেল্লাল হোসেন নাঈম, স্টাফ রিপোর্টারঃ
খুরশীদ আলম ১৯৪৬ সালের ১লা আগস্ট জয়পুরহাট জেলার কালাই থানার হারুনজাও গ্রামে জন্মগ্রহন করেন । বাবার নাম এ.এফ তসলিম উদ্দিন আহম্মেদ ও মা মেহেরুন্নেসা খানম । তিন ভাই, দুই বোন এর মধ্যে তিনি ছিলেন বড় চাচা ড়া. আবু হায়দার সাইদুর রহমান ঢাকা ডেন্টাল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস পড়ার সময় ঢাকা মেডিক্যালভিত্তিক ‘ঢাকা শিল্পীসংঘ’-এ গান করতেন, রবীন্দ্রসংগীত শেখাতেন। ১৯৬২ ও ১৯৬৩ সালে ইস্ট পাকিস্তান এডুকেশন উইকে পর পর দুইবার রবীন্দ্রসংগীত ও আধুনিকে পুরো পূর্ব-পাকিস্তানে প্রথম হন। ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত নাজিমউদ্দিন রোডের রেডিও অফিসে রবীন্দ্রসংগীত করেন। অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের গান দিয়ে তাঁর সংগীত জীবনের শুরু। ১৯৬৫ সালে আইয়ুব খান রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ করে দিলেন।
ফলে ১৯৬৬ সালে খোন্দকার ফারুক আহমেদের কাছে দুই দিনে সাতটি আধুনিক গান শিখে বেতারে অডিশন দেন। এখান থেকে আর পিছে ফিরে তাকাতে হয় নি। দাদা জসিম উদ্দিন আহমেদের প্রতিষ্ঠিত আজিমপুরের ওয়েস্ট এন্ড হাই স্কুলে এক বছর পড়েন খুরশীদ আলম । এরপর কাপ্তানবাজারের নবাবপুর হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক।
মিউজিক কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। পরে জগন্নাথ কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করলাম। ১৯৬৭ সালে শাহবাগ বেতারে প্রথম গান করে ২০ টাকা সম্মানী পেয়েছিলেন। প্রথম গান—‘‘চঞ্চল দুনয়নে বল না কী খুঁজছ?/চম্পা না করবী না পলাশের গুচ্ছ?’’ ওইদিন গীতিকার কবি সিরাজুল ইসলামের লেখা ও আজাদ রহমানের সুরে আরেকটি গান গেয়েছিলাম—‘তোমার দু-হাত ছুঁয়ে শপথ নিলাম/থাকব তোমারই আমি কথা দিলাম।’ সুরে গান করেছেন খুরশীদ আলম। বেতারে প্রচারিত তাঁর উল্লেখযোগ্য দেশগান হলো: ‘পদ্মা, মেঘনা, সুরমা, যমুনা’র গীতিকার মনিরুজ্জামান মনির, ‘পাখির নাম দোয়েল, ফুলের নাম শাপলা, দেশের নাম বাংলাদেশ সহ অসংখ্য দেশগান।
১৯৬৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর ‘আগন্তুক’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে প্রথম প্লেব্যাক করেন তিনি । চাচা জসিম উদ্দিন আহমেদের লেখা ‘তোমার দু-হাত ছুঁয়ে শপথ নিলাম’ গানটির সুরকার ছিলেন আজাদ রহমান । নায়করাজ রাজ্জাকের লিপে ছিল। এই গান গেয়ে খুরশীদ আলম সম্মানী পেয়েছিলেন মাত্র ১০০ টাকা।
চলচ্চিত্রে তিনি নায়করাজ রাজ্জাকের লিপে সবচেয়ে বেশি গান করেছেন। ‘সাধারণ মেয়ে’ চলচ্চিত্রে তে খুব দ্রুতলয়ের একটি গান ছিল—‘ডিম মারো ডিম মারো/যত পারো জোরে মারো মারো/আমি ভেজে ভেজে খাবো/খেয়ে খেয়ে তাগড়া হব/তাগড়া হয়ে আগ্রা যাব।’ লিখেছিলেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সুরকার সত্য সাহা, জাফর ইকবালের লিপে ছিল। আর তৃতীয় চলচ্চিত্র —পিচ ঢালা পথ। শাপমুক্তি, সমাধি, গড়মিল, মানুষের মন, আজাদ রহমানের সুরে মতিমহল, রাতের পরে দিন, অনন্ত প্রেম, গাইলেন জনপ্রিয় সব গান। মিন্টু আমার নাম ছবিতে আজকে না হয় ভালোবাসো আর কোনো দিন নয়, দোস্ত-দুশমন ছবিতে চুমকি চলেছে একা পথে, তাঁর সুরে আমার বিখ্যাত গান।
সুরকার আজাদ রহমান, ‘অশ্রু দিয়ে লেখা’, ‘সোহাগ’সহ অনেক ছবিতে গেয়েছেন। তাঁর সুরে ‘অশ্রু দিয়ে লেখা’ আনোয়ার পারভেজ, খোন্দকার নুরুল আলম, মনসুর আহমদের মতো বিখ্যাত সুরকারদের গান গেয়েছেন খুরশীদ আলম। সত্য সাহা তাঁকে ‘সমাধি’তে গাইয়েছেন—‘মা গো মা আমারে বানাইলি তুই দিওয়ানা।’
এটির গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার। ছবিটির পরিচালক দিলীপ বিশ্বাস। মাকে নিয়ে তিনি প্রায় ৫০টি গান গেয়েছেন। ‘মতিমহল’-এ আহমদ জামান চৌধুরীর লেখা ও আজাদ রহমানের সুরে ‘মাগো তোর চরণতলে বেহেশত আমার’ গেয়েছি। সুবলদার সুর ও মাসুদ করিমের লেখা আরেকটি বিখ্যাত গান হলো—
‘মা তুই বেহেশতেরই খোদার হাসি।’ ক্যারিয়ারের ৫০বছরের ৪২৫টি ছবিতে প্লেব্যাক করেছেন খুরশীদ আলম। পরে শিল্পকলায় যোগ দিলাম । ১৯৮৪ সালে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে বিসিআইসির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান কোহিনূর কেমিক্যালে যোগ দেন এবং ২০০২ সালে সেখান থেকে ম্যানেজার হিসেবে অবসর নিয়েছি। ১৯৭৪ সালে রীনা আলমের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন খুরশীদ আলম। তাদের দুই সন্তান।
সংগীতে বিশেষ অবদান রাখায় ২০১৮ খুরশীদ আলম কে বাংলাদেশ সরকার একুশে পদক প্রদান করেন। ২০১৮ জয়পুরহাটে প্রথমবারের মতো এই কৃতি নসন্তান কে গুণীজন সম্মাননা প্রদান করে নবনাট্য সংঘ, জয়পুরহাট শাখা।জয়পুরহাটে এই কৃতি সন্তানের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন একুশে আবৃত্তি পরিষদ ও নবনাট্য সংঘ জয়পুরহাট শাখার সভাপতি রাজা চৌধুরী, নবনাট্য সংঘ জয়পুরহাট শাখার সাধারণ সম্পাদক দিলীপ সেন, ছড়াকার মোস্তফা আনসারি, জয়পুরহাট শর্ট ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়াদ আলম।