
বীরগঞ্জ(দিনাজপুর)প্রতিনিধি:
আপন আলোয় উদ্ভাসিত জয়িতারা। অভাব, অনটন ও বঞ্চনার করাল গ্রাস থেকে বেরিয়ে আসা জয়িতাদের সাফল্যের গল্পগুলো আসলেই ঈর্ষণীয়। দৃঢ় মনোবল, অদম্য সাহস, সততা আর আপন কর্মকে সঙ্গী করে জীবনযুদ্ধের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তারা আজ আপন আলোয় উদ্ভাসিত। পাশাপাশি অনুকরণীয় দৃষ্টান্তও বটে। তাদেরই একজন রাজিয়া পান্না। বয়স প্রায় ২৩ এর কোটায়।
জীবনযুদ্ধে সংগ্রাম করে আজ তিনি গর্বিত। শুধু তাই নয়, সফল জননী হওয়ার গৌরবও অর্জন করেছেন তিনি। দিনাজপুরের বীরগঞ্জের মোহনপুর ইউনিয়নের মাটিয়াকুড়া গ্রামের বাসিন্দা রাজিয়া পান্না। সামাজিক ক্ষেত্রে অবদান রাখায় ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ কর্মসূচির আওতায় উপজেলার সফল জয়িতা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। বেগম রোকেয়া দিবসে উপজেলা মিলনায়তনে জয়িতা অন্বেষণ কার্যক্রমের অধীনে শ্রেষ্ঠ জয়িতাদের এ সম্মাননা-সংবর্ধনা দেয়া হয়। আর এখানেই সংবর্ধনা নিতে এসেছিলেন।
সেখানেই কথা হয় রাজিয়া পান্নার সঙ্গে। সংবর্ধনা পাওয়ার পর তার সফল জননী হওয়ার গল্প শুনতে চাইলে তিনি আবেগাপ্লুত কষ্টেগাঁথা জীবন সংগ্রামের বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, মাটিয়াকুড়া গ্রাম উন্নয়ন কমিটির একজন সাধারণ সদস্য। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাল্যবিবাহ হয় এবং অল্প বয়সে মা হই। ফলে অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় এবং মোকাবিলার জন্য চেষ্টা করি। সেসময় ওয়ার্ল্ড ভিশনের বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করি এবং শিশু সুরক্ষা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্য, মায়েদের গর্ভকালীন এবং প্রসব পরবতী চেকআপ এবং সেবাসমূহ, শিক্ষার গুরুত্ব, সামাজিক নিরাপত্তা বিষয় জানতে পারি এবং বর্তমানে সেগুলো অনুশীলন করছি।
গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর থেকে আমি এডভোকেসি, মনিটরিং নেতৃত্ব ও দক্ষতা উন্নয়নসহ আরো অনেক বিষয় জানতে পারি। দীর্ঘ সময় অভাব-অনটনের পর এখন সামাজিকভাবে সম্মান নিয়ে জীবনযাপন করছি।
আমি এখন আনন্দিত ও গর্বিত যে, আজ আমার সন্তানরা স্ব-স্ব অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে। তিনি জানান, জীবনের শুরুদিকে টানাপোড়নের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। শ্বশুরের দেয়া মাটির কাজই ছিল স্বামীর উপার্জনের একমাত্র উৎস। এদিকে আস্তে আস্তে ছেলে-মেয়েরাও বড় হতে থাকে, বড় হয় সংসারও। শুরু হয় অভাব-অনটন। ‘জয়িতা’ রাজিয়া পান্না জানান, আমি নিজেই এখন বাল্য বিবাহ, শিশু সুরক্ষা বিষয়ে সবাইকে সচেতন করি।
বিশেষ করে কিশোরীদের ও তাদের অভিভাবকদের। স্থানীয় সরকারের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে আমি ২৭ জন শিশুর টিকা কার্ড, ২৯ জন শিশুর জন্ম নিবন্ধন, ৩০৪ জনের কোভিড ভ্যাকসিন টীকা, ৫২ টি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর কার্ড, ৭ টি রেশন কার্ড, মাতৃত্ব কালীন কার্ড ২ টি নিয়ে দিতে সহায়তা করেছি।
আমার নিজস্ব উদ্যোগে এবছর ২ জন শিশুর বাল্য বিবাহ বন্ধ করতে পেরেছি। আমি আমার সমাজের জন্য যে কাজ করছি, বীরগঞ্জ এপি, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ-এর সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব ছিল না। তাই আমি আমি ওয়ার্ল্ড ভিশনকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
এরকম অনেক জয়িতাগণ ওয়ার্ল্ড ভিশনের সাথে যুক্ত হয়ে সমাজের জনগণ ও শিশুদের উন্নয়নে সর্বদায় কাজ করে চলেছেন।