Subscribe our Channel

তেঁতুলিয়ায় জাল দলিল, ভূয়া ওয়ারিশানে রমরমাট ভাবে চলছে জমি ক্রয়ের পাঁয়তারা

মুুহম্মদ তরিকুল ইসলাম নিজস্ব প্রতিবেদক : সাব-রেজিষ্ট্রার দেখেও দেখে না, হয়রানি পোহাচ্ছে এলাকার মানুষ
মুুহম্মদ তরিকুল ইসলাম, পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধিঃ পঞ্চগড় জেলাধীন তেঁতুলিয়া উপজেলায় জাল দলিল এবং ভূয়া ওয়ারিশানে সাব-রেজিস্ট্রারকে ম্যানেজ করে বেক্সিমকো কোম্পানির উদ্দেশ্যে চলছে জমি ক্রয়ের পাঁয়তারা ॥ হয়রানি পোহাচ্ছে এলাকার শত শত মানুষ অভিযোগ উঠেছে। এতে বেক্সিমকো কোম্পানির উদ্দেশ্যে জমি ক্রয় করছেন ধানমন্ডি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নিউমার্কেট ১২০৫ এলাকার ধানমন্ডি আ/এ, রোড নং- ০৫, বাসা নং- ৫০ এর মৃত সাবের আহাম্মদ চৌধুরীর ছেলে ওসমান কায়সার চৌধুরী।
বেক্সিমকো কোম্পানি উপজেলার ৭নং দেবনগড় ইউপি’র শেখগছ মৌজার জে.এল.নং-৩২-এর ডাঙ্গাপাড়ায় নামে মাত্র ছোট সাইন বোর্ড টাঙ্গিয়ে ব্যারিষ্টার-ভজনপুর পাকা রাস্তার পূর্বে পাশে একটি টিনশেডের ঘর স্থাপন করে জাল দলিলের ভিত্তিতে এবং ভূয়া ওয়ারিশদের কাছ থেকে জমি ক্রয়ের পাঁয়তারা চালাচ্ছেন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানাযায়, ২০১৬/১৭ সালের দিকে বেক্সিমকো কোম্পানি পাঠানপাড়া, শেখগছ, ভুটুজোত, বাংলাচন্ডি, বানিয়াপাড়া, ময়নাগুড়ি গ্রামাস্থ এলাকায় আসেন। অত:পর ডাঙ্গাপাড়া নামক স্থানে আমিরুলের কাছ থেকে জমি ক্রয় করে একটি সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেয়। এরপর শুরু হয় জমি ক্রয়ের পাঁয়তারা।
জানাযায়, পাঠানপাড়া গ্রামের আজিজার রহমান পিতা-রফিজ উদ্দিন এবং আব্দুস সাত্তার পিতা-সমির উদ্দিনের মাধ্যমে অত্র এলাকার জমাজমি ক্রয় করেন বেক্সিমকো কোম্পানির প্রতিনিধিরা। কোম্পানির প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব পালন করেন, উপজেলার দেবনগড় ইউপি’র নিজবাড়ি গ্রামের মৃত গফুর প্রধানের ছেলে হারুন প্রধান এবং ঢাকা গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর পৌরসভার শ্রীফলতলী গ্রামের মৃত মকলেছ উদ্দিনের ছেলে বাবর মিয়া।
আরোও জানাযায়, বেক্সিমকো কোম্পানির প্রতিনিধিরা জালজালিয়াতির মাধ্যমে জমি ক্রয় করতে থাকলে উপজেলার দেবনগড় ইউপি’র পাঠানপাড়া গ্রামের মৃত খবর আলীর ছেলে সাহেদুল হক গত ইং ১৪/০১/২০২০ তারিখে বিজ্ঞ আমলী আদালত-৪, তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড় এ ৭জনকে আসামী করে একটি ফৌজদারী মামলা দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখিত উপজেলার দেবনগড় ইউপির পাথরঘাটা গ্রামের মৃত জয়েন উদ্দীনের ছেলে সরওয়ার্দীর গত ইং ০৫/০৫/১৯৮৩ তারিখের ১১৩৮০ নং দলিলটি ভূয়া, ভিত্তিহীন এবং কাল্পনিক আসামীগণ স্বীকার করেন। এবং ভূয়া দলিলের ভিত্তিতে গত ইং ০৬/০৯/২০১৯ তারিখের ১০০৭নং ভূয়া খারিজ খতিয়ানের জমাজমি বাবদ সরওয়ার্দী ওসমান কায়সার চৌধুরীকে গত ইং ১৯/১১/২০১৯ তারিখের ৩২১৫/১৯নং যে দলিলটি তেঁতুলিয়া সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস থেকে সম্পাদন করা হয়েছে তা ঠিক হয়নি মর্মে স্বীকার করেন। অত:পর শেখগছ মৌজার জে.এল.নং-৩২, এস.এ খতিয়ান নং- ৫৪৮ এর তিনি কোন মালিক নহেন তাও স্বীকার করেন। যাহা নোটারী পাবলিক, পঞ্চগড় এর মাধ্যমে এ্যাফিডেভিট করা হয়েছে। যাহার এ্যাভিডেভিট নং- ৩৭৮/২০২০, তারিখ ০২/০২/২০২০। ইহা ছাড়াও একই ইউপি’র শেখগছ গ্রামের মৃত তালেব আলীর ছেলে শাহজাহান আলী গত ইং ০৯/০১/২০২০ তারিখে বিজ্ঞ আমলী আদালত-৪, তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড় এ ৪জনকে আসামী করে একটি ফৌজদারী মামলা দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখিত উপজেলার দেবনগড় ইউপির পাঠানপাড়া গ্রামের মৃত সমির উদ্দীনের ছেলে আব্দুস সাত্তার গত ইং ০৪/১২/২০১৯ তারিখের ৩৩৫৮/১৯নং দলিলটিতে শেখগছ মৌজার জে.এল.নং-৩২, এস.এ খতিয়ান নং- ২৯৫ এর অন্যতম রেকর্ডীয় মালিক কালু মোহাম্মদের ভূয়া ওয়ারিশ হয়ে ওসমান কায়সার চৌধুরীকে তেঁতুলিয়া সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস থেকে উক্ত দলিলটি সম্পাদন করা হয়েছে তা ঠিক হয়নি মর্মে সকল আসামীগণ স্বীকার করেন। অত:পর আব্দুস সাত্তার কালু মোহাম্মদের কোন ওয়ারিশ নহেন মর্মে ইহাও স্বীকার করেন। যাহা নোটারী পাবলিক, পঞ্চগড় এর মাধ্যমে গত ইং ০২/০২/২০২০ তারিখে একখানি এ্যাফিডেভিট করা হয়েছে।
এতে এ্যাফিডেভিটে যে সমস্ত শর্ত সাপেক্ষে মিমাংশা হয় তাহা পালন না করে পুরনায় জাল জালিয়াতি কার্যক্রম শুরু করেন বেক্সিমকো কোম্পানির প্রতিনিধিরা। যাহা গত ০৪/০৮/২০২০ ইং তারিখের ১৪৮৪/২০ নং দলিল ছাড়াও তেঁতুলিয়া সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস থেকে আরও দলিল সৃজন করা হয়েছে বলে জানাগেছে।
অপরদিকে বেক্সিমকো কোম্পানির উক্তরুপ ভূমিদস্যুতার জালজালিয়াতির কার্যকলাপে ভুক্তভোগী পাঠানপাড়া গ্রামের মৃত খবর আলীর ছেলে শামসুদ্দিন বিজ্ঞ আমলী আদালত-৪, তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড় এ ৮জনকে আসামী করে একটি ফৌজদারী মামলা দায়ের করেন। যাহার মামলা নং-৩০৮/২০, তারিখ: ১৯/০৮/২০২০। অত:পর ভুক্তভোগী ভুটুজোত গ্রামের মৃত আফতাব উদ্দীনের ছেলে বেলায়েত হোসেন বিজ্ঞ আমলী আদালত-৪, তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড় এ ৮জনকে আসামী করে আরোও একটি ফৌজদারী মামলা দায়ের করেন। যাহার মামলা নং-৩২৮/২০, তারিখ: ২০/০৮/২০২০। এছাড়াও ভুক্তভোগী শেখগছ গ্রামের মৃত তালেব আলীর ছেলে আশরাফুল ইসলাম বিজ্ঞ আমলী আদালত-৪, তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড় এ ৬জনকে আসামী করে আরও একটি ফৌজদারী মামলা দায়ের করেন। যাহার মামলা নং-৩২৯/২০,তারিখ: ২০/০৮/২০২০।
এ ব্যাপারে মামলার বাদী শামসুদ্দিন, আফতাব উদ্দীন এবং আশরাফুল ইসলাম জানান, বেক্সিমকো কোম্পানি তাদের এলাকায় নামে মাত্র এক দু’জনের কাছ থেকে সঠিকভাবে জমাজমি ক্রয় করেন। এতে কোম্পানীর প্রতিনিধিরা ওসমান কায়সার নামে যত জমাজমি ক্রয় করেন তা ভূয়া ওয়ারিশ এবং জাল দলিলের মাধ্যমে জমাজমি ক্রয় করেন। তারা আরোও জানান, শেখগছ মৌজার জে.এল.নং-৩২ এর প্রায় ৩৩টিরও বেশি দলিল জালজালিয়াতির মাধ্যমে দলিল লেখকদের যোগসাজসে এবং সাব-রেজিষ্ট্রারকে ম্যানেজ করে দলিল সম্পাদন করা হয়েছে। গত ০৪/১২/২০১৯ ইং তারিখের দলিল নং-৩৩৫৮ এর আব্দুস সাত্তার পিতা কালু মোহাম্মদের ভূয়া ওয়ারিশ পরিচয়ে দেবুপাড়া গ্রামের মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে দলিল লেখক আনিছুর রহমান কর্তৃক সম্পাদিত যার সনদ নং-৩০ এর মাধ্যমে তেঁতুলিয়া সাব-রেজিষ্ট্রিার রবিউল ইসলামের দ্বারা পাশ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, গত ০৩/১২/২০১৯ ইং তারিখের দলিল নং-৩৩০৯ এবং ১৯/১১/২০১৯ ইং তারিখের দলিল নং-৩২১৫এ সহিদুল পিতা পরভাসু এবং সরওয়ার্দী পিতা জয়েন উদ্দীনের ভূয়া ওয়ারিশ পরিচয়ে শিতলীপাড়া গ্রামের মৃত সফির উদ্দীনের ছেলে দলিল লেখক আব্দুর রহিম কর্তৃক সম্পাদিত যার সনদ নং-২৪ এর মাধ্যমে তেঁতুলিয়া সাব-রেজিষ্ট্রিার রবিউল ইসলামের দ্বারা পাশ করা হয়েছে।
তারা আরোও জানান, এ বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করলে দপ্তর কর্তৃক এখনও আসামীদের বিরুদ্ধে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এতে আসামীরা আরোও বেপরোয়া হয়ে জালজালিয়াতীর কার্যক্রম বাড়িয়ে দেয়। এবং বাদী শামসুদ্দিন, আফতাব উদ্দীন এবং আশরাফুল ইসলামের ওপর জালজালিয়াতীর মূল নায়ক সরওয়ার্দী ও আব্দুস সাত্তার পৃথক দুটি অসত্য, বানোয়াট মামলা দায়ের করেন।
এলাকাবাসি সূত্রে জানাযায়, বেক্সিমকো কোম্পানি এলাকায় নানান অনিয়মে জমাজমি ক্রয় করে ভূমিদস্যুতার রুপ ধারণ করেছে। কোম্পানীর অনেক টাকা রয়েছে মর্মে এলাকার অসহায় গরীব ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না। দরখাস্তের মাধ্যমে প্রশাসনিক সহযোগিতা পেলে তারা এর প্রতিবাদ করবেন। এলাকাবাসি জানান, তাদের গ্রামের আজিজার এবং আব্দুস সাত্তার নামে ব্যক্তিদ্বয় আগে কৃষি এবং ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন এখন তারা কোটি টাকার মালিক। কিভাবে এত টাকা মালিক হলেন প্রশ্ন এলাকাবাসির।
এতে মামলায় আসামী আব্দুস সাত্তার, আজিজার রহমান ও সহিদুলের সঙ্গে কথা হলে তারা বিষয়টি অস্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে বেক্সিমকো কোম্পানির উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত জমাজমির মালিক ওসমান কায়সার চৌধুরীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে ফোন রিসিভ করা হয়নি।
অত:পর এব্যাপারে তেঁতুলিয়া সাব-রেজিষ্ট্রার রবিউল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, তার মুহুরী যে মূল কাগজপত্র উপস্থাপন করেছে তা তফসিলে মিল করে যা সঠিক পেয়েছে তারই ভিত্তিতে দলিল পাশ করেছেন। কোনটি ভূয়া আর কোনটি সঠিক ওই সময়ে নির্ণয় করবেন কিভাবে জানান তিনি।
অপরদিকে দলিল লেখক আব্দুর রহিম এবং আনিছুর রহমান মুঠোফোনে জানান, তারা উপস্থিত তফসিল ভুক্ত যে মূল কাগজ পত্র পেয়েছে তারই ভিত্তিতে দলিল সম্পাদন করেন। তারা জাল দলিল ও ভূয়া ওয়ারিশানের বিষয়টি অবগত ছিলেন না জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে বেক্সিমকো গ্রুপ কোম্পানির প্রতিনিধি হারুন প্রধান মুঠোফোনে জানান, ইতোপূর্বে সাহেদুল ও শাহজাহান নামে দু’জন মামলা করলে তা আপোষ করেন। তিনি বলেন, তাদের জমি ক্রয়ে কিছুটা ভূল হয়েছিল তাই তারা আপোষ মিমাংশা করেন। তিনি আরও বলেন, আপনি জানেন একটি কোম্পানি দিতে গেলে কিছু এদিক ওদিক করতে হয়। কেননা তাদের মেডিয়া, দালাল, মুহুরী, সাব-রেজিষ্ট্রার ইত্যাদিকেও দেখতে হয় জানিয়েছেন তিনি।
এব্যাপারে বেক্সিমকো কোম্পানি এলাকাধীন ৭নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য সরিফুল ইসলাম জানান, কোম্পানীর দুষ্কৃতিকারী নকলবাজ প্রতিনিধিরা ইউনিয়নের হুবহু ওয়ারিশান এবং দালিখাসহ বই ছাপিয়ে ইউপি ওযার্ড সদস্য ও চেয়ারম্যানের শীল স্বাক্ষর জাল করে ভূয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে জমাজমি ক্রয় করেন। তিনি আরও বলেন, আপনারা সাংবাদিক ভাইয়েরা পারেন বেক্সিমকো কোম্পানির এই জালজালিয়াতির কার্যক্রম সমাজে তুলে ধরতে, এর জন্যই অনেকে ভূমি অফিস থেকে দাখিলা নিতে গেলে দাখিলা পাচ্ছেন না। ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে মূল মালিকের জমির পরিমান অমনা অমনিতেই বেক্সিমকো কোম্পানির লোকেরা ভূয়া ওয়ারিশান দেখিয়ে খতিয়ানের মালিক সেজে দাখিলা কেটে নেয়। তিনি আরোও জানান, বেক্সিমকো কোম্পানির এই জালজালিয়াতির ভিত্তিতে উপজেলার ৭নং দেবনগড় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মহসিনউল হক ৫জনকে আসামী করে গত ০১/০৫/২০১৮ ইং তারিখে তেঁতুলিয়া মডেল থানায় এফ.আই.আর ১/৫৬ নং একটি ফৌজদারী মামলা করেন। যাহা গত ৯আগস্ট২০২০ ইং তারিখে অভিযোগ পত্র নং- ৭৬এ কোর্টে অভিযোগ দাখিল করেন তেঁতুলিয়া মডেল থানা।
এ বিষয়ে ৭নং দেবনগড় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মহসিনউল হক জানান, যারা জাল ওয়ারিশান এবং ইউপি কর্তৃপক্ষের শীল স্বাক্ষর নকল করেন তাদের বিরুদ্ধে তেঁতুলিয়া মডেল থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। কোর্ট তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *