Subscribe our Channel

পঞ্চগড়ে সাব-রেজিস্ট্রার ও  দলিল লেখকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ 
মোঃ তোতা মিয়া জেলা প্রতিনিধি পঞ্চগড়: পঞ্চগড় সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। পঞ্চগড় সদর উপজেলার কামাতকাজলদিঘী ইউনিয়নের আবু সায়েম নামের এক ভুক্তভোগি অভিযোগ তুলে জানান, গত মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) কামাতকাজলদিঘী মৌজার ৬ শতক জমি রেজিস্ট্রির জন্য দলিল লেখক শাহজাহান আলী তার কাছে ১২ হাজার টাকা দাবী করেন।
বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে ৬ হাজার ৯৭৮ টাকায় তাকে জমি রেজিস্ট্রি করতে হয়। ৬ হাজার ৯৭৮ টাকার মধ্যে ৩ হাজার ৪২৮ টাকা ব্যাংক চালান করা হলেও অবশিষ্ট টাকার কোন রশিদ পাননি তিনি।
সায়েম বলেন, চলতি মাসে আরো দুইটি দলিল করতে ব্যাংক চালান বাদ দিয়েও শুধু সমিতির জন্যই রশিদ ছাড়াই ৪ হাজার ৭৫০ টাকা দিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, দলিল লেখক শাজাহান আলী তাকে জানিয়েছেন, অতিরিক্ত ৪ হাজার ৭৫০ টাকার মধ্যে সমিতিতে জমা হবে দুই হাজার টাকা এবং বাকী ২ হাজার ৭৫০ টাকা অফিসের জন্য। এবার তর্ক করার কারণে সমিতির টাকা বাদ দিয়ে অফিসের ২ হাজার ৭৫০ টাকা দিতে হয়েছে।
মুঠোফোনে জানতে চাইলে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণের বিষয়টি এড়িয়ে যান দলিল লেখক শাহজাহান আলী।
এ দিকে রেজিস্ট্রি অফিসের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সাব-রেজিস্ট্রার আ. ন. ম বজলুর রহমান মণ্ডলের বিরুদ্ধে রয়েছে জাল খতিয়ানে জমি রেজিষ্ট্রির অভিযোগ।
সম্প্রতি জেলা প্রশাসক বরাবর তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করেছেন, শাহ আলমগীর নামের এক ভুক্তভোগি। তিনি সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের মেহেরপাড়া এলাকার আবু তালেবের ছেলে।
শাহ আলমগীর বলেন, আমরা ফইমদ্দীনের অসৎ উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে সকল ওয়ারিশগণসহ আমি সাব-রেজিস্ট্রার আ. ন. ম বজলুর রহমান মণ্ডলকে বিষয়টি অবগত করি। তিনি আমাদেরকে আশ্বস্ত করেন যে, ওয়ারিশদের উপস্থিতি ছাড়া এই খতিয়ানের জমি রেজিস্ট্রি করা হবেনা।
অথচ, গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে চাকলাহাট ইউনিয়নের মেহেরপাড়া এলাকার আবেদ আলীর বাড়িতে প্রাইভেট কার যোগে গোপনে গিয়ে ২০৬৭ ও ২০৬৮ সংখ্যার দুইটি দলীল রেজিস্ট্রি করেন সাব-রেজিস্ট্রার। ওই দিন ২০৬৭ নং দলীলে ১২৯ নং খতিয়ানের ৯৩৯, ৯৪৭, ৮২১, ৯০৬, ৮৬৮ ও ৯৪৫ নং দাগের জমি রেজিস্ট্রি হয়।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ওই ৬ দাগের মধ্যে ৫টি ঠিক থাকলেও ৯৪৫ সংখ্যার দাগটি সম্পূর্ণ ভূয়া। ১২৯ নং খতিয়ানে ৯৪৫ সংখ্যার কোন দাগ নেই। ক্রেতা-বিক্রেতা, দলীল লেখক আর সাব-রেজিস্ট্রার যোগসাজস করে মূল খতিয়ান স্ক্যান করে ফাঁকা জায়গায় ৯৪৫ বসিয়ে এই প্রতারণা করে।
অভিযোগকারি শাহ আলম আরো বলেন, সাব রেজিস্ট্রার মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ওই দলীল দুটি রেজিস্ট্রি করেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাব-রেজিস্ট্রার আ. ন. ম বজলুর রহমান মণ্ডল বিষয়টি এড়িয়ে যান।
জানা গেছে, সাব-রেজিস্ট্রার আ. ন. ম বজলুর রহমান মণ্ডলের সম্পৃক্ততায় চলছে দলিল লেখক সমিতির চাঁদাবাজির এই রমরমা কারবার। সরকারি নিয়মনীতির বাইরে চালিয়ে যাচ্ছে এসব ব্যবসা। আইন ও বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে দিনে-দুপুরে সকলের সামনেই চলছে এ উন্মুক্ত লুটপাট। অফিস চত্বরে বসেই সমিতির কতিপয় নেতা অবৈধভাবে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজারো সাধারণ মানুষের পরিশ্রমের অর্থ।
টুনিরহাট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জমি রেজিস্ট্রি করতে সরকারি খরচের বাইরে সমিতিকে দিতে হয় দলিল প্রতি ৪ হাজার ৭৫০ টাকা। এর মধ্যে দুই হাজার টাকা সমিতি বাবদ রেখে বাকী টাকা ঢুকে খোদ সাব-রেজিস্ট্রারসহ অফিসের বিভিন্ন জনের পকেটে।
তবে দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহামত আলী উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
জেলা রেজিস্ট্রার মীর মাহাবুব মেহেদী মুঠোফোনে  সাংবাদিকদের জানান, সাব-রেজিষ্ট্রারের সাথে কথা হয়েছে , সাব-রেজিস্ট্রার লেখক সমিতির সাথে কথা বলেছে, এমন কাজ করলে আর অফিস করবেন না বলে জানিয়েছেন।তবে জাল খতিয়ানে জমি রেজিস্ট্রি অভিযোগের বিষয়টি মিথ্যা বলে জানার এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন স্থানীয় ভুক্তভোগীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *