
পীরগঞ্জ নিউজ ডেক্স :
ভুলুয়া ছিল বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী অঞ্চলের প্রাচীনতম ইতিহাসের স্নায়ুকেন্দ্র। বৌদ্ধযুগ, পাল ও সেনযুগ এবং পরবর্তীকালের বাংলার স্বাধীন সুলতানি আমল, পাঠান তুর্কি আমল, মুঘল আমলসহ বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর যুগ পর্যন্ত প্রাচীন সূত্র ও দলিল দস্তাবেজে; প্রাচুর্যে ভরা সম্পদশালী ‘ভুলুয়া’ নামে প্রাচীন একটি বিখ্যাত জনপদ ও সমুদ্র বন্দরের বহু উল্লেখ দেখা যায়….. খৃষ্টের জন্মের বহু পূর্ব থেকেই বাণিজ্যিকভাবে অত্যন্ত বিখ্যাত ও ব্যবসা সফল সমুদ্র বন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল প্রাচীন ‘ভুলুয়া’ সমুদ্র বন্দর প্রাচীন পৃথিবীর আন্তর্জাতিক নৌ বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ন কেন্দ্র ছিল প্রাচীন ‘ভুলয়া’ সমুদ্র বন্দর।
খৃষ্টের জন্মের বহু পূর্ব থেকেই মিসর, লবানন, জাঞ্জিবার, বসরা, শ্রীলঙ্কা, তাম্রলিপি, সুমাত্রা, জাভা প্রভৃতি সমুুদ্র উপকুলবর্তী অঞ্চলের বানিজ্যিক জাহাজসমূহ প্রাচীন ‘ভুলয়া’ সমুদ্র বন্দরে ভিড়তো…. সুপ্রাচীন কাল থেকে যোগাযোগের কারনে এ অঞ্চলে একটি স্বাতন্ত্র সভ্যতার সৃষ্টি হয়। ভাষা সংস্কৃতি কৃষ্টিতে ছিলো পৃথিবীর নানান জাতীর একটি মিশ্র সংস্কৃতি। ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছিলো একটি উন্নত নগর। পরবর্তীতে যা হয়ে উঠেছিলো ঐতিহ্যবাহি ঐতিহাসিক নগরীতে…. সমুদ্র গুপ্তের আমলের (৩৭৫-৪১৪ খৃষ্টাব্দ) শেষ ভাগে চৈনিক পরিব্রাজক ফা হিয়ান তার ভ্রমন কাহিনীতে নিম্নগঙ্গায় মোহনায় ‘ভুলুয়া’ নামে একটি বিখ্যাত জনপদ ও সমুদ্র বন্দরের কথা উলেখ করেছেন।
বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী প্রাচীন এই ভূখন্ডের সমৃদ্ধি, বর্ণাঢ্য নৈসর্গিক সৌন্দর্য আর জনগনের সুখময় জীবনের রূপ দেখে বিস্ময় বিমূঢ় হয়েছিলেন চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন-সাঙ ….. মোহাম্মদ বিন তুঘলকের (১৩২৫-১৩৫০) শাসনামলে ভূলুয়া দিল্লীর সাম্রাজ্যভূক্ত ছিল। চতুর্দশ শতকে এই সুপ্রাচীন ‘ভুলুয়া’ অঞ্চল সফর করেছেন প্রখ্যাত আরব পর্যটক ইবনে বতুতা, তার ভ্রমন কাহিনীতেও প্রাচীন ‘ভুলুয়া’ নামে বিখ্যাত জনপদ ও সমুদ্র বন্দরের কথা উলেখ করেছেন …. মহান এই পরিব্রাজক আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া, প্রাচীন ভারত, দক্ষিন-পূর্ব এশিয়া এবং দূর প্রাচ্যের বহু দেশ আর জনপদ ভ্রমন করেছেন।
কিন্তু বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী এই ভূখন্ডের মত আর কোনো অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সম্পদ সমারোহ তার মনে অমন গভীর ভাবে রেখাপাত করতে পারেনি ….. সম্রাট আকবরের শাসনামলে প্রাচীন ‘ভুলুয়া’ নামে রাজ্যটি ছিল, আইন-ই-আকবরী গ্রন্থে ওই রাজ্যের নাম লেখা আছে ‘বালাজোয়ার’, যার রাজা ছিলেন লক্ষ্মণ মাণিক্য (মিথিলা রাজ্যের রাজা বিশ্বম্ভর শুরের অধস্তন পুরুষ লক্ষ্মণ মাণিক্য), মেঘনার পূর্ব দিকে বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে গঠিত হয়েছিল এ রাজ্য, যার অধিকাংশ এলাকা বর্তমানে নোয়াখালী জেলার অন্তর্ভুক্ত। প্রাচীন ভূলুয়া ছিল প্রাচুর্যে ভরা সম্পদশালী এক জনপদ।
যার কারণে ভূলুয়া, সমূদ্রপথে কিংবা স্থল পথে বিভিন্ন গোষ্ঠির বার বার দখল, আক্রমণ, প্রতি-আক্রমণের স্বীকার হয়েছিল। নবাবী আমলের শেষ নবাব সিরাজ উদ দৌলা ইংরেজদের হাতে নিহত হলে, ইংরেজ শাসন আমলে ১৭৮৭ সালে ফোর্ট উইলিয়ামের ফরমান অনুসারে ভূলুয়া জেলা হিসেবে পরিগণিত হয়। এরপর মিঃ প্লাউডেন ১৮২১ সালে জেলা কালেক্টরের দায়িত্বে নোয়াখালী অঞ্চলে নিযুক্ত হন এবং ভূলুয়াকে জেলা হিসেবে ঘোষণা করেন, যা ইতোপূর্বে একটি পরগণা হিসেবে পরিগণিত ছিল, ১৮৬৮ সালে প্রাচীন ভূলুয়ার নাম পরিবর্তন করে নোয়াখালী রাখা হয়।
অন্যদিকে কুমিল্লা জেলা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬০ সালে। সংস্কৃতির কথা বললে নোয়াখালীর ভাষা সংস্কৃতি কুমিল্লার চেয়ে বহুগুনে বিস্তৃত। নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষীপুর এ তিন জেলা ছাড়াও পাশ্ববর্তী চট্টগ্রামের কিছু অংশ, স্বন্দীপ, মনপুরা এবং কুমিল্লারই বেশ কিছু অংশ নোয়াখালীর সংস্কৃতিতে চলে অাসছে হাজার বছর ধরে…… তাই যৌক্তিকভাবে বলা চলে, বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মতামত উপেক্ষা করে, ত্রিপুরার ভগ্নাংশ, মীরজাফর খন্দকার মোস্তাকের জন্মস্থান কখনো বিভাগ হওয়ার যোগ্যতা রাখে না।
বিভাগ যদি করতেই হয় নোয়াখালীকেই বিভাগ করতে হবে…… ইনশাআল্লাহ….. (সংগৃহীত)